» মন্দির

মন্দির গল্পটি ১৩০৯ বঙ্গাব্দে একটি সাহিত্য স্মরণিকা “কুন্তলীন পুস্তিকামালা”-য় প্রথম প্রকাশিত হয়। গল্পটি ১৩০৯ বঙ্গাব্দে (১৯০৩ খৃষ্টাব্দে) “কুন্তলীন পুরষ্কার” প্রাপ্ত। গল্পটি তাঁর সম্পর্কীয় মাতুল (মামা) ও বাল্যবন্ধু শ্রীসুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে প্রকাশিত। “বসুমতী” পত্রিকার সম্পাদক দেড়শ’টিContinue Reading

» এক

এক গ্রামে নদীর তীরে দু’ঘর কুমোর বাস করিত। তাহারা নদীর মাটি তুলিয়া ছাঁচে ফেলিয়া পুতুল তৈরি করিত, আর হাটে বিক্রয় করিয়া আসিত। চিরকাল তাহারা এই কাজ করে, চিরকাল এই মাটির পুতুল তাহাদিগের পরনের বস্ত্র ওContinue Reading

» দুই

এ সহজ কথাটার অনেক আলোচনা করিয়াও শক্তিনাথ আধখানা মাত্র বুঝিয়াছিল। এক পয়সার পুতুল ঠিক পয়সায় বিকাইবে, তাহার ভ্রূ থাকুক, আধখানা ভ্রূ নাই থাকুক। দুই চক্ষু সমান অসমান যাই হউক, সেই এক পয়সা! মিছামিছি কে এতContinue Reading

» তিন

এ গ্রামের জমিদার কায়স্থ। দেবদ্বিজে তাঁহার বাড়াবাড়ি ভক্তি। গৃহদেবতা নিকষনির্মিত মদনমোহন-বিগ্রহ; পার্শ্বে সুবর্ণরঞ্জিত শ্রীরাধা—অত্যুচ্চ মন্দিরে রৌপ্য-সিংহাসনে তাঁহারাই প্রতিষ্ঠিত। বৃন্দাবনলীলার কত অপরূপ চিত্র মন্দির-গাত্রে সংলগ্ন। উপরে কিংখাপের চন্দ্রাতপ, তাহাতে শতশাখার ঝাড় দুলিতেছে। এক পার্শ্বে মর্মর-বেদীর উপরContinue Reading

» চার

অনেকদিনের কথা বলিতেছি। জমিদার রাজনারায়ণবাবু যখন প্রৌঢ়ত্বের সীমায় পা দিয়া প্রথম বুঝিলেন যে, এ জীবনের ছায়া ক্রমশঃ দীর্ঘ ও অস্পষ্ট হইয়া আসিতেছে, যেদিন সর্বপ্রথম বুঝিলেন, যে এ জমিদারি ও ধন-ঐশ্বর্য ভোগের মিয়াদ প্রতিদিন কমিয়া আসিতেছে,Continue Reading

» পাঁচ

যথাসময়ে অর্পণার বিবাহ হইয়া গেল। মন্দির ছাড়িয়া এইবার যে তাহাকে অন্যত্র যাইতে হইবে, এই আশঙ্কায় তাহার মুখের হাসি অসময়ে শুকাইয়া গেল। দিন দেখান হইতেছে, তাহাকে শ্বশুরবাড়ি যাইতে হইবে। পরিপূর্ণ বিদ্যুৎ বুকে চাপিয়া বর্ষার ঘনকৃষ্ণ মেঘখণ্ডContinue Reading

» ছয়

অপর্ণা স্বামীগৃহে। সেথায় তাহার ইচ্ছাহীন স্বামী-সম্ভাষণের ভিতর এতটুকু আবেগ, এতটুকু চাঞ্চল্যও প্রকাশ পাইল না। প্রথম প্রণয়ের স্নিগ্ধ সঙ্কোচ, মিলনের সলজ্জ উত্তেজনা, কিছুই তাহার ম্লান চক্ষু দুটির পূর্বদীপ্তি ফিরাইয়া আনিল না। প্রথম হইতেই স্বামী ও স্ত্রীContinue Reading

» সাত

অমরনাথের বুঝিবার ভুল—সে উপহার লইয়া স্ত্রীর কাছে আসিয়াছে। বেলা তখন নটা-দশটা। স্নানান্তে অপর্ণা পূজা করিতে যাইতেছিল। গলার স্বর যতটা সম্ভব মধুর করিয়া অমর কহিল, অপর্ণা, তোমার জন্য কিছু উপহার এনেচি, দয়া করে নেবে কি? অপর্ণাContinue Reading

» আট

তাহার পর দুই দিন দুই রাত্রি গত হইয়াছে, অমরনাথ ঘরে শুইতে আসে নাই। মা জানিতে পারিয়া বধূকে ডাকিয়া ঈষৎ ভর্ৎসনা করিলেন, পুত্রকে ডাকিয়া বুঝাইয়া বলিলেন; দিদিশাশুড়ি এই সূত্রে একটু রঙ্গ করিয়া লইলেন। এমনি সাতে-পাঁচে ব্যাপারটাContinue Reading

» নয়

ঝাড়া বৃষ্টির একটা সুবিধে আছে—তাহাতে আকাশ নির্মল হয়। কিন্তু টিপিটিপি বৃষ্টিতে মেঘ কাটে না, শুধু পায়ের নীচে কাদা ও চতুর্দিকে নিরানন্দময় ভাব বাড়িয়া উঠে। বাড়ি হইতে যে কাদা মাখিয়া অমরনাথ কলিকাতায় আসিল, তাহা ধুইয়া ফেলিবারContinue Reading

» দশ

শক্তিনাথ একমনে ঠাকুর গড়িতেছিল। পূজা করার চেয়ে ঠাকুর তৈরি করিতে সে অধিক ভালবাসিত। কেমন রূপ, কেমন নাক, কান, চোখ হইবে, কোন্‌ রং বেশি মানাইবে এই তাহার আলোচ্য বিষয়। কি দিয়া তাঁহার পূজা করিতে হয়, কিContinue Reading

» এগার

একমাস গত হইয়াছে। আচার্য যদুনাথ জমিদার রাজনারায়ণবাবুকে বুঝাইয়া বলিতেছেন, আপনি ত সমস্তই জানেন, বড় মন্দিরে বৃহৎ পূজা ভট্টাচার্যের ছেলের দ্বারা কিছুতেই সম্পন্ন হইতে পারে না। রাজনারায়ণবাবু সায় দিয়া বলিলেন, অনেকদিন হ’ল অপর্ণাও ঠিক এই কথাইContinue Reading

» বার

থিয়েটারের স্টেজে যেমন পাহাড়-পর্বত। ঝড়-জল এক নিমেষে উড়িয়া গিয়া একটা মস্ত রাজপ্রাসাদ কোথা হইতে আসিয়া জোটে, আর লোকজনের সুখ-সম্পদের মাঝে দুঃখ-দৈন্যের সমস্ত চিহ্ন বিলুপ্ত হয়, শক্তিনাথের জীবনেও যেন সেইরূপ হইয়াছে। সে জাগিয়াছিল, এখন ঘুমাইয়া সুখস্বপ্নContinue Reading

» তের

শক্তিনাথ মন্দিরে প্রবেশ করিয়াছে, পূজা শেষ হইয়াছে। চাদরে সেই শিশি দুইটি বাঁধা আছে—কিন্তু দিতে সাহস হইতেছে না, এই কয়দিনে অপর্ণা তাহার নিকট হইতে এত দূরে সরিয়া গিয়াছে। মুখ ফুটিয়া কিছুতে বলিতে পারিল না—তোমার জন্য সাধContinue Reading