» একবিংশ পরিচ্ছেদ

বিলাস যথাসময়ে কাছারিতে আসিয়া নিজের কাজ করিয়া বাড়ি চলিয়া যাইত; নিতান্ত প্রয়োজন হইলে কর্মচারী পাঠাইয়া বিজয়ার মত লইত, কিন্তু আপনি আসিত না। তাহাকে ডাকাইয়া না পাঠাইলে যে নিজে যাচিয়া আসিবে না, ইহাও বিজয়া বুঝিয়াছিল। অথচContinue Reading

» দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ

সমস্ত পথটার মধ্যে দুজনের শুধু এই কথাটাই হইল। নলিনী জিজ্ঞাসা করিল, কি উপহার দেবার কথা বলেছিলেন? নরেন্দ্র ক্লান্তকণ্ঠে কহিল, আর একদিন এ কথা আপনাকে বলব—কিন্তু আজ নয়। সেই বাঁশের পুলটার কাছে আসিয়া নরেন সহসা দাঁড়াইয়াContinue Reading

» ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ

নিদ্রাহীন রজনীর পরিপূর্ণ ক্লান্তি লইয়া বিজয়া সকালে নীচের বসিবার ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিল, জমিদা্রী সেরেস্তার খেরো-বাঁধানো খাতাগুলি টেবিলের উপর থাকে থাকে সাজানো রহিয়াছে, এবং বৃদ্ধ গোমস্তা অদূরে দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করিতেছে। সে সবিনয়ে কহিল, মা, এগুলোContinue Reading

» চতুর্বিংশ পরিচ্ছেদ

বিজয়ার সর্বাগ্রে মনে হইয়াছিল, কাল প্রভাতেই সে যেমন করিয়া হোক কলিকাতায় পলাইয়া এই ব্যাধের ফাঁদ হইতে আত্মরক্ষা করিবে। কিন্তু, উত্তেজনার প্রথম ধাক্কাটা যখন কাটিয়া গেল, তখন দেখিতে পাইল তাহাতে জালের ফাঁসি যে শুধু বেশী করিয়াContinue Reading

» পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ

নিদারুণ সংশয়ের বেড়া-আগুনের মধ্যে বিজয়ার চিত্ত যে কতদূর পীড়িত এবং উদ্‌ভ্রান্ত হইয়া উঠিয়াছিল, তাহা আপনাকে চূড়ান্তভাবে সমর্পণ করিয়া না দেওয়া পর্যন্ত সে ঠিকমত বুঝিতে পারে নাই। আজ সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়াই বুঝিল, তাহার মন খুব শান্তContinue Reading

» ষড়্‌বিংশ পরিচ্ছেদ

সেইদিন সন্ধ্যাবেলায় আসন্ন বিবাহোৎসব উপলক্ষে কয়েকটা প্রয়োজনীয় কথাবার্তার পরে পিতাপুত্র রাসবিহারী ও বিলাসবিহারী প্রস্থান করিলে বিজয়া তাহার পড়িবার ঘরে প্রবেশ করিয়া আশ্চর্য হইয়া গেল। দয়াল এমনি তন্ময় হইয়া বসিয়াছিলেন যে কাহারও আগমন লক্ষ্যও করিলেন না।Continue Reading

» ছবি

ছবি গল্পটি ১৩১৬ বঙ্গাব্দে (১৯০৯)¬ সাহিত্যিক ও সমালোচক শ্রীসুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্পাদিত পূজা-বার্ষিকী (একটি শারদ প্রকাশনা) “আগমনী” পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়, এবং প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় মাঘ, ১৩২৬ বঙ্গাব্দে (১৫ই জানুয়ারি, ১৯২০)। গ্রন্থের নাম “ছবি”, প্রকাশকContinue Reading

» এক

এই কাহিনী যে সময়ের, তখনও ব্রহ্মদেশ ইংরাজের অধীনে আসে নাই। তখনও তাহার নিজের রাজারানী ছিল, পাত্রমিত্র ছিল, সৈন্য-সামন্ত ছিল; তখন পর্যন্ত তাহারা নিজেদের দেশ নিজেরাই শাসন করিত। মান্দালে রাজধানী, কিন্তু রাজবংশের অনেকেই দেশের বিভিন্ন শহরেContinue Reading

» দুই

বা-থিন ছবি আঁকিত। তাহার শেষ ছবিখানি সে একজন সওদাগরকে দিয়া রাজার দরবারে পাঠাইয়া দিয়াছিল। রাজা ছবিখানি গ্রহণ করিয়াছেন এবং খুশী হইয়া রাজ-হস্তের বহুমূল্য অঙ্গুরী পুরস্কার করিয়াছেন। আনন্দে মা-শোয়ের চোখে জল আসিল, সে তাহার পাশে দাঁড়াইয়াContinue Reading

» তিন

বসন্তের প্রারম্ভে এই ইমেদিন গ্রামে প্রতি বৎসর অত্যন্ত সমারোহের সহিত ঘোড়দৌড় হইত। আজ সেই উপলক্ষে গ্রামান্তের মাঠে বহু জনসমাগম হইয়াছিল। মা-শোয়ে ধীরে ধীরে বা-থিনের পশ্চাতে আসিয়া দাঁড়াইল। সে একমনে ছবি আঁকিতেছিল, তাই তাহার পদশব্দ শুনিতেContinue Reading

» চার

প্রায় অপরাহ্নবেলায় মা-শোয়ের রূপা-বাঁধানো ‘ময়ূরপঙ্খী’ গোযান যখন ময়দানে আসিয়া পৌঁছিল, তখন সমবেত জনমণ্ডলী প্রচণ্ড কলরবে কোলাহল করিয়া উঠিল। সে যুবতী, সে সুন্দরী, সে অবিবাহিতা, এবং বিপুল ধনের অধিকারিণী। মানবের যৌবন-রাজ্যে তাহার স্থান অতি উচ্চে। তাইContinue Reading

» পাঁচ

সান্ধ্যভোজের প্রসঙ্গে পরদিন মা-শোয়ে বা-থিনকে কহিল, কাল সন্ধ্যাটা আনন্দে কাটিল। অনেকেই দয়া করিয়া আসিয়াছিলেন। শুধু তোমার সময় ছিল না বলিয়া তোমাকে ডাকি নাই। সেই ছবিটা সে প্রাণপণে শেষ করিতেছিল, মুখ না তুলিয়াই বলিল, ভালই করিয়াছিলে।Continue Reading

» ছয়

চিরদিনের অভ্যাস, প্রভাত হইতেই মা-শোয়েকে টানিতে লাগিল। আবার সে গিয়া বা-থিনের ঘরে আসিয়া বসিল। প্রতিদিনের মত আজিও সে কেবল একটা ‘এসো’ বলিয়াই তাহার সহজ অভ্যর্থনা শেষ করিয়া কাজে মন দিল; কিন্তু কাছে বসিয়াও আর একজনেরContinue Reading

» সাত

শিশুকাল হইতে যে দুইজনের কখনও একমুহূর্তের জন্য বিচ্ছেদ ঘটে নাই, অদৃষ্টের বিড়ম্বনায় আজ মাসাধিক কাল গত হইয়াছে, কাহারও সহিত কেহ সাক্ষাৎ করে নাই। মা-শোয়ে এই বলিয়া আপনাকে বুঝাইবার চেষ্টা করে যে, এ একপ্রকার ভালোই হইলContinue Reading

» আট

এই অপমানে বা-থিনের চোখে জল আসিল। কিন্তু সে কাহাকেও দোষ দিল না, কেবল আপনাকে বারংবার ধিক্কার দিয়া কহিল, এ ঠিকই হইয়াছে। আমার মত লজ্জাহীনের ইহারই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রয়োজন যে ঐখানেই—ঐ একটা রাত্রির ভিতর দিয়াইContinue Reading

» নয়

পো-থিন সাহস পাইয়া বলিল, তোমাকে দেবতাও কামনা করেন মা-শোয়ে, আমি ত মানুষ। মা-শোয়ে অন্যমনস্কের মত উত্তর দিল, কিন্তু যে করে না, সে বোধ হয় তবে দেবতারও বড়। কিন্তু এ প্রসঙ্গকে সে আর অগ্রসর হইতে দিলContinue Reading

» দশ

ঋণের দাবীর চিঠি আসিল। কাগজখানা হাতে করিয়া বা-থিন অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। ঠিক এই জিনিসটি সে আশা করে নাই বটে, কিন্তু আশ্চর্যও হইল না। সময় অল্প, শীঘ্র কিছু একটা করা চাই। একদিন নাকি মা-শোয়েContinue Reading

» বিলাসী

পাকা দুই ক্রোশ পথ হাঁটিয়া স্কুলে বিদ্যা অর্জন করিতে যাই। আমি একা নই—দশ-বারোজন। যাহাদেরই বাটী পল্লীগ্রামে, তাহাদেরই ছেলেদের শতকরা আশি জনকে এমনি করিয়া বিদ্যালাভ করিতে হয়। ইহাতে লাভের অঙ্কে শেষ পর্যন্ত একেবারে শূন্য না পড়িলেও,Continue Reading

» মামলার ফল

বুড়া বৃন্দাবন সামন্তর মৃত্যুর পরে তাহার দুই ছেলে শিবু ও শম্ভু সামন্ত প্রত্যহ ঝগড়া-লড়াই করিয়া মাস-ছয়েক একান্নে এক বাটীতে কাটাইল, তাহার পরে একদিন পৃথক হইয়া গেল। গ্রামের জমিদার চৌধুরীমশাই নিজে আসিয়া তাহাদের চাষবাস, জমিজমা, পুকুর-বাগানContinue Reading

» গৃহদাহ

‘গৃহদাহ’ শরৎচন্দ্রের এক অমর সৃষ্টি। এ উপন্যাস আবহমান বাংলার প্রণয় সঙ্কটে ভুগতে থাকা তিনজন নর-নারীর ত্রিভুজ প্রেমের আখ্যান। ‘গৃহদাহ’ উপন্যাসে শরৎচন্দ্র সমসাময়িক বাঙালির আত্মিক বৈশিষ্ট্য, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, ব্যক্তিমানসের পারস্পরিক সম্পর্ক, তাদের প্রেম-পরিণয়, বিশ্বাসকে তুলে ধরতেContinue Reading