রণসজ্জা
১
রণসাজে সাজে
চৌহানের বল,
অশ্ব গজ রথ
পদাতির দল,
পতাকার রবে,
পবন চঞ্চল,
বাজিল বাজনা-ভীষণ নাদ।
ধূলিতে পূরিল
গগনমণ্ডল,
ধূলিতে পূরিল
যমুনার জল,
ধূলিতে পূরিল
অলক কুন্তল,
যথা কূলনারী গণে প্রমাদ।।
২
দেশ দেশ হতে
এলো রাজগণ
স্থানেশ্বর পদে
বধিতে যবন
সঙ্গে চতুরঙ্গ
সেনা অগণন-
হর হর বলে যতেক বীর।
মদবার1 হতে
আইল সমর2
আবু হতে
এলো দুরন্ত প্রমর
আর্য্য বীরদল
ডাকে হর! হর!
উছলে কাঁপিয়া কালিন্দী-নীর।।
৩
গ্রীবা বাঁকাইয়া
চলিল তুরঙ্গ
শূণ্ড আছাড়িয়া
চলিল মাতঙ্গ
ধনু আস্ফালিয়া-
শুনিতে আতঙ্গ-
দলে দলে দলে পদাতি চলে।
বসি বাতায়ন
কনৌজনন্দিনী
দেখিলা অদূরে
চলিছে বাহিনী
ভারত ভরসা,
ধরম রক্ষিণী-
ভাসিলা সুন্দরী নয়নজলে।।
৪
সহসা পশ্চাতে
দেখিল স্বামীরে,
মুছিলা অঞ্চলে
নয়নের নীরে,
যুড়ি দুই কর
বলে “হেন বীরে
রণসাজে আমি সাজাব আজ।”
পরাইল ধনী
কবচকুণ্ডল
মুকতার দাম
বক্ষে ঝলমল
ঝলসিল রত্ন
কিরীট মণ্ডল
ধনু হস্তে হাসে রাজেন্দ্ররাজ।।
৫
সাজাইয়া নাথে
যোড় করি পাণি
ভারতের রাণী
কহে মৃদু বাণী
“সুখী প্রাণেশ্বর
তোমায় বাখানি
এ বাহিনীপতি চলিলা রণে।
লক্ষ যোধ প্রভু
তব আজ্ঞাকারী,
এ রণসাগরে
তুমি হে কাণ্ডারী
মথিবে সে সিন্ধু
নিয়তি প্রহারি
সেনার তরঙ্গ তরঙ্গসনে।।
৬
আমি অভাগিনী
জনমি কামিনী
অবরোধে আজি
রহিনু বন্দিনী
না হতে পেলাম
তোমার সঙ্গিনী,
অর্দ্ধাঙ্গ হইয়া রহিনু পাছে।
যবে পশি তুমি
সমর-সাগরে
খেদাইবে দূরে
ঘোরির বানরে
না পাব দেখিতে,
দেখিবে ত পরে,
তব বীরপনা! না রব কাছে।।
৭
সাধ প্রাণনাথ
সাধ নিজ কাজ
তুমি পৃথ্বীপতি
মহা মহারাজ
হানি শত্রুশিরে
বাসবের বাজ
ভারতের বীর আইস ফিরে।
নহে যদি শম্ভু
হয়েন নির্দ্দয়
যদি হয় রণে
পাঠানের জয়
না আসিও ফিরে,-
দেহ যেন বয়
রণক্ষেত্রে ভাসি শত্রুরুধিরে।।
৮
কত সুখ প্রভু,
ভুঞ্জিলে জীবনে!
কি সাধ বা বাকি
এ তিন ভূবনে?
নয় গেল প্রাণ,
ধর্ম্মের কারণে?
চিরদিন রহে জীবন কার?
যুগে যুগে নাথ
ঘোষিবে সে যশ
গৌরবে পূরিত
হবে দিক্ দশ
এ কান্ত শরীর
এ নব বয়স
স্বর্গ গিয়ে প্রভু পাবে আবার।।
৯
করিলাম পণ
শুন হে রাজন
নাশিয়া ঘোরীরে,
জিতি এই রণ
নাহি যতক্ষণ
কর আগমণ,
না খাব কিছু, না করিব পান।
জয় জয় বীর
জয় পৃথ্বীরাজ,
লভ পূর্ণ জয়
সমরেতে আজ
যুগে যুগে প্রভু
ঘোষিবে এ কাজ
হর হর শম্ভো কর কল্যাণ।।
১০
হর হর হর!
বম্ বম্ কালী!
বম্ বম্ বলি
রাজার দুলালি,
করতালি দিল-
দিল করতালি
রাজরাজপতি ফুল্ল হৃদয়।
ডাকো বামা জয়
জয় পৃথ্বীরাজ
জয় জয় জয়
জয় পৃথ্বীরাজ-
জয় জয় জয়
জয় পৃথ্বীরাজ
কর, দুর্গে, পৃথ্বীরাজের জয়।।
১১
প্রসারিয়া রাজ
মহা ভূজদ্বয়ে,
কমনীয় বপু,
ধরিল হৃদয়ে,
পড়ে অশ্রুধারা
চারি গণ্ড বয়ে,
চুম্বিল সুবাহু চন্দ্রবদনে।
স্মরি ইষ্টদেবে
বাহিরিল বীর,
মহাগজপৃষ্ঠে
শোভিল শরীর
মহিষীর চক্ষে
বহে ঘন নীর।
যে জানে এতই জল নয়নে।
১২
লুটাইয়া পড়ি
ধরণীর তলে
তবু চন্দ্রাননী
জয় জয় বলে
জয় জয় বলে-
নয়নের জলে
জয় জয় কথা না পায় ঠাই।
কবি বলে মাতা
মিছে গাও জয়
কাঁদ যতক্ষণ
দেহ প্রাণ রয়,
ও কান্না রহিবে
এ ভারতময়
আজিও আমরা কাঁদি সবাই।।