সুরের দুলাল

পাকা ধানের গন্ধ-বিধুর হেমন্তের এই দিন-শেষে,

সুরের দুলাল, আসলে ফিরে দিগ্‌বিজয়ীর বর-বেশে!

আজও মালা হয়নি গাঁথা হয়নি আজও গান-রচন,

কুহেলিকার পর্দা-ঢাকা আজও ফুলের সিংহাসন।

অলস বেলায় হেলাফেলায় ঝিমায় রূপের রংমহল,

হয়নিকো সাজ রূপকুমারীর, নিদ টুটেছে এই কেবল।

আয়োজনের অনেক বাকি–শুননু হঠাৎ খোশখবর,

ওরে অলস, রাখ আয়োজন, সুর-শাজাদা আসল ঘর।

ওঠ রে সাকি, থাক না বাকি ভরতে রে তোর লাল গেলাস,

শূন্য গেলাস ভরব–দিয়ে চোখের পানি মুখের হাস।

দম্ভ ভরে আসল না যে ধ্বজায় বেঁধে ঝড়-তুফান,

যাহার আসার খবর শুনে গর্জাল না তোপ-কামান,

কুসুম দলি উড়িয়ে ধূলি আসল না যে রাজপথে–

আয়োজনের আড়াল তারে করব গো আজ কোনোমতে।

সে এল গো যে-পথ দিয়ে স্বর্গে বহে সুরধুনী,

যে-পথ দিয়ে ফেরে ধেনু মাঠের বেণুর রব শুনি।

যেমন সহজ পথ দিয়ে গো ফসল আসে আঙিনায়,

যেমন বিনা সমারোহে সাঁঝের পাখি যায় কুলায়।

সে এল যে আমন-ধানের নবান্ন উৎসব-দিনে,

হিমেল হাওয়ায় অঘ্রানের এই সুঘ্রাণেরই পথ চিনে।

আনেনি সে হরণ করে রত্ন-মানিক সাত-রাজার

সে এনেছে রূপকুমারীর আঁখির প্রসাদ, কণ্ঠহার।

সুরের সেতু বাঁধল সে গো, ঊর্ধ্বে তাহার শুনি স্তব,

আসছে ভারত-তীর্থ লাগি শ্বেত-দ্বীপের ময়দানব।

পশ্চিমে আজ ডঙ্কা বাজে পুবের দেশের বন্দীদের,

বীণার গানে আমরা জয়ী, লাজ মুছেছি অদৃষ্টের।

কণ্ঠ তোমার জাদু জানে, বন্ধু ওগো দোসর মোর!

আসলে ভেসে গানের ভেলায় বৃন্দাবনের বংশী-চোর।

তোমার গলার বিজয়-মালা বন্ধু একা নয় তোমার,

ওই মালাতে রইল গাঁথা মোদের সবার পুরস্কার।

কখন আঁখির অগোচরে বসলে জুড়ে হৃদয়-মন,

সেই হৃদয়ের লহো প্রীতি, সজল আঁখির জল-লিখন।