সাম্যবাদী

গাহি সাম্যের গান–

যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান

যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।

গাহি সাম্যের গান!

কে তুমি?–পারসি? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?

কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বলো আরও!

বন্ধু, যা-খুশি হও,

পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুথি ও কেতাব বও,

কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক–

জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব পড়ে যাও, যত শখ–

কিন্তু, কেন এ পণ্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?

দোকানে কেন এ দর কষাকষি?–পথে ফুটে তাজা ফুল!

তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,

সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!

তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,

তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।

কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?

হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!

বন্ধু, বলিনি ঝুট,

এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।

এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,

বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্‌ এ, মদিনা, কাবা-ভবন,

মস্‌জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,

এইখানে বসে ঈশা, মুসা পেল সত্যের পরিচয়।

এই রণ-ভূমে বাঁশির কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,

এই মাঠে হল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।

এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি

ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি।

এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহ্বান,

এইখানে বসি’ গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!

মিথ্যা শুনিনি ভাই,

এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।