তিন
জয়ন্ত স্তব্ধ হয়ে বসে রইল কয়েক মিনিট। তারপর ধীরে ধীরে বললে, ঘটনাগুলোর মধ্যে কী কী লক্ষ করবার আছে, তা দেখ। বাংলাদেশে নয় ফুট উঁচু মানুষ থাকলে এতদিনে সে সুবিখ্যাত হয়ে পড়ত। সুতরাং অনুমান করা যেতে পারে অপরাধী নয় ফুট উঁচু নয়। সে দেহের নীচের দিকটা ঘাগরায় বা ঘেরাটোপে ঢেকে রাখে। কেন? তার মুখ অমানুষিক বলে মনে হয়। কেন? সে একটা লম্বা বাঁশ হাতে করে দাঁড়িয়ে থাকে, আবার বাঁশটাকে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে যায়। কেন? সে প্রত্যেকবারেই চেষ্টা করে, তার চেহারা কেউ যেন স্পষ্ট করে দেখতে না পায় কেন? শশীপদ শুনেছে, খটাখট খটাখট করে একটা শব্দ ক্রমেই দূরে চলে যাচ্ছে। কীসের শব্দ?
সুন্দরবাবু বললেন, তুমি কিছু অনুমান করতে পারছ?
কিছু কিছু পারছি বইকী! হরেন, ওই তিনটে ঘটনায় যাঁদের টাকা খোয়া গিয়েছে, তারা কি শহরের বিভিন্ন পল্লির লোক?
না, তারা সকলেই প্রায় এক পাড়াতেই বাস করেন।
–তবে তোমাদের পাড়ায় বা পাড়ার কাছাকাছি কোথাও বাস করে এই অপরাধী!
–কেমন করে জানলে?
নইলে ঠিক কোন দিনে কোন সময়ে কোন ব্যক্তি প্রচুর টাকা নিয়ে দেশে ফিরে আসবে, অপরাধী নিশ্চয়ই সে খবর রাখতে পারত না।
না জয়ন্ত, আমাদের পাড়ায় কেন, আমাদের শহরেও নয় ফুট উঁচু লোক নেই।
–আমিও ওকথা জানি।
–তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না।
–আপাতত বেশি কিছু বুঝেও কাজ নেই। আমাকে আরও কিঞ্চিৎ চিন্তা করবার সময় দাও। তুমি দেশে ফিরে যাচ্ছ তো?
হ্যাঁ।
–পরশুদিনই আমার কাছ থেকে একখানা জরুরি চিঠি পাবে। আমার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে তুমি কলকাতার এসে আমাদের দেশে নিয়ে যাবে।
হরেন চলে গেল। জয়ন্ত যেন নিজের মনেই গুণগুণ করে বলল, খটাখট খটখট খটাখট। মূল্যবান সূত্র।