পঞ্চম পরিচ্ছেদ—অনার্য্য বাঙ্গালী জাতি[১]

বাঙ্গালার মধ্যে মাল ও মালো বলিয়া দুইটি জাতি আছে। রাজমহল জেলার অন্তর্গত মালপাহাড়িয়া বলিয়া একটি অনার্য্য জাতি আছে; তাহারা কোন আর্য্যভাষা কহে না। কিন্তু বাঙ্গালী মালেরা বাঙ্গালা কথা কয় এবং বাঙ্গালী বলিয়া গণ্য। জেনেরল কনিংহাম্ প্রাচীন রোমীয় লেখন প্লিনি হইতে দুইটি বাক্য উদ্ধৃত করিয়া দেখাইয়াছেন যে, তখনও মালেবা বলিয়া জাতি ভারতবর্ষে ছিল। পুরাণাদিতে মালবের প্রসঙ্গ ভূয়োভূয়ঃ দেখা যায় এবং মেঘদূতে মালবদিগের নাম উল্লেখ আছে। অতএব এখন যেমন মালজাতি আছে, প্রাচীন মালজাতিও সেইরূপ ছিল। কিন্তু প্লিনি যে ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, তাহাতে বোধ হয় যে, মালেরা আর্য্যজাতি হইতে একটি পৃথক্ জাতি ছিল। জেনেরল কনিংহাম্ বলেন, এই প্লিনির লিখিত মালেরা টলেমিপ্রণীত মণ্ডলজাতি। টলেমিলিখিত মণ্ডলজাতি আধুনিক মুণ্ড কোলজাতি বলিয়া অনুমিত হইয়াছে। বিভার্‌লি সাহেব অনুমান করেন যে, ঐ প্লিনির লিখিত মালজাতি এখনকার বাঙ্গালী মাল। এখন বাঙ্গালার বাহিরে যেখানে মাল নাম পাই, সেইখানে সেইখানে অনার্য্যদিগকেই দেখিতে পাই। কান্দু নামক অতি অসভ্য অনার্য্যজাতির দেশের বিভাগকে মাল বা মালো বা মালিয়া বলে।[২] অনার্য্যপ্রধান মানভূম প্রদেশকে মালভূম বা মল্লভূমি বলে। রাজমহলের দ্রাবিড়বংশীয় অনার্য্য পাহাড়িদিগকে মালের জাতি বলে। উড়িষ্যার কিঁউঝড় নামক অরণ্য রাজ্যে ভূঁইয়া নামক এক অনার্য্য জাতি আছে, তাহাদের একটি থাকের নাম মালভূঁইয়া।[৩] বুকানন্ হ্যামিল্টন্ ভাগলপুর জেলার ভিতরে বন্য জাতির মধ্যে মালের বলিয়া একটি অনার্য্যজাতি দেখিয়াছিলেন। কাঁধদিগের মালিয়া বলিয়া একটি জাতি আছে।[৪] রাজমহলীর মাল পাহাড়িদিগের কথা পূর্ব্বেই বলিয়াছি। পক্ষান্তরে আর্য্যদিগের মধ্যে মল্ল শব্দ আছে—অনেকে বলেন, এই মালেরা আর্য্যমল্ল। আর্য্যমল্ল হইতে মালজাতির উৎপত্তি, না অনার্য্য মল্লগণ বাহুযুদ্ধে কুশলী বলিয়া আর্য্যভাষায় বাহুযোদ্ধার নাম মল্ল হইয়াছে? মালেরা যে অনার্যজাতি হইতে উদ্ভূত হইয়াছে, তাহা এক প্রকার স্থির বলা যাইতে পারে।

সাঁওতালদিগের পাহাড়মধ্যে ডম নামে একটি অনার্য্যজাতি আছে। তাহাদিগের হইতে বাঙ্গালার ডোমজাতির উৎপত্তি হইয়াছে, হণ্টর সাহেব এমন অনুমান করেন।[৫] ইহা সত্য বটে যে, অন্যান্য নীচ হিন্দুজাতির ন্যায় ডোমেরা ব্রাহ্মণদিগের পৌরোহিত্য গ্রহণ করে না। তাহাদিগের পৃথক্ ধর্ম্মযাজক আছে। ঐ ধর্ম্মযাজকদিগের নাম পণ্ডিত। এইরূপ ডোমের পণ্ডিত আমি স্বয়ং অনেক দেখিয়াছি। নেপালের নিকটে ডুমী নামে এক অনার্য্যজাতি আজিও বাস করে।[৬]

হণ্টর সাহেব দেখাইয়াছেন যে, অনেক অনার্য্যজাতির নাম অনার্য্যভাষায় মনুষ্যবাচক শব্দবিশেষ হইতে হইয়াছে। হো শব্দ ইহার পূর্ব্বে উদাহরণ দেওয়া গিয়াছে। সাঁওতালী ভাষায় হাড় শব্দে মনুষ্য। ইহা হইতে তিনি অনুমান করেন যে, হাড়ি অনার্য্যবংশ।

পূর্ব্বে বলিয়াছি যে, ককেশীয় ও মোঙ্গলীয় ভিন্ন আরও অনেক মনুষ্যজাতি আছে, তাহার মধ্যে কোন কোন জাতি স্বভাবতঃই অতিশয় কৃষ্ণবর্ণ। আফ্রিকার নিগ্রোরা ইহার উদাহরণ। কেবল রৌদ্রের উত্তাপে তাহারা এত কৃষ্ণবর্ণ, এমত নহে; যেমন তপ্ত দেশে কাফ্রির বাস আছে, তেমনি তপ্ত দেশে গৌরবর্ণ আর্য্য বা মোঙ্গলের বাস আছে। আমেরিকার যে প্রদেশে ইণ্ডিয়ানদিগের বর্ণ লোহিত, সেই প্রদেশেই সাক্সন্ বংশীয়দিগের বর্ণ গৌর; তিন শত বৎসরে কিছুমাত্র কৃষ্ণতাপ্রাপ্ত হয় নাই। ভারতবর্ষে এক প্রদেশেই শ্যামবর্ণ আর্য্যেরা এক মসীবর্ণ অনার্য্যেরা একত্র বাস করিতেছে। রৌদ্রসন্তাপে কতক দূর কৃষ্ণতা জন্মিতে পারে বটে। ভারতীয় আর্য্যদের তাহা কিছু দূর জন্মিয়াছে সন্দেহ নাই। তাহাদের মধ্যে কেহ গৌর, কেহ শ্যামল, কিন্তু বিন্ধ্যপর্ব্বতের নিকটবাসী কতকগুলি অনার্য্যজাতি একেবারে মসীকৃষ্ণ। বিষ্ণুপুরাণে তাহাদিগের বর্ণনা আছে। কথিত আছে যে, বেণ রাজার ঊরুদেশ হইতে দগ্ধ কাষ্ঠের ন্যায় খর্ব্বকায় অট্টাস্য এক পুরুষ জন্মে। এই বর্ণনায় মধ্যভারতের খর্ব্বাকৃত অট্টাস্য কৃষ্ণকায় অনার্য্যদিগকে পাওয়া যায়। ঐ পুরুষ নিষাদ নামে সংজ্ঞাত হইয়াছে।[৭] ইহারই বংশে নিষাদাখ্য অনার্য্যজাতির উৎপত্তি।[৮] হরিবংশে বেণের উপাখ্যানে ঐরূপ লিখিত হইয়া, ঐ পুরুষকে নিষাদ ও ধীবর জাতির আদিপুরুষ বলিয়া বর্ণনা আছে।[৯] মনু বলিয়াছেন যে, আয়োগবি অর্থাৎ শূদ্র হইতে বৈশ্যাতে উৎপাদিতা স্ত্রীর গর্ভে নিষাদের ঔরসে মার্গব বা দাস জন্মে। আর্য্যাবর্ত্তে তাহাদিগকে কৈবর্ত্ত বলে।[১০] অমরকোষাভিধানে কৈবর্ত্তদিগের নাম কৈবর্ত্ত, দাস, ধীবর। পূর্ব্বেই দেখান গিয়াছে যে, ঋগ্বেদ সমালোচনায় দাস নামে অনার্য্যজাতি পাওয়া যায়। দাস, ধীবর, কৈবর্ত্ত তিনই এক। যদি দাস ও ধীবর অনার্য্য হইল, তবে কৈবর্ত্তও অনার্য্যজাতি। এক্ষণে বাঙ্গালায় কৈবর্ত্তের মধ্যে কতকগুলি চাষা কৈবর্ত্ত; কতকগুলি জেলে কৈবর্ত্ত। পূর্ব্বে সকলেই মৎস্যব্যবসায়ী ধীবর ছিল, সন্দেহ নাই। তাহাদিগের সংখ্যা বৃদ্ধি হইলে কতকগুলি কৃষিব্যবসায় অবলম্বন করিল, তাহারাই চাষা কৈবর্ত্ত। ধোপারা ঐরূপ কেহ কেহ চাষ করিয়া চাষাধোপা বলিয়া পৃথক্ জাতি হইয়াছে।

পুণ্ড্র বা পৌণ্ড্র প্রাচীন জাতির উল্লেখ মন্বাদিতে পাওয়া যায়। মনু লিখিয়াছেন যে, পৌণ্ড্রক প্রভৃতি জাতি ক্রিয়ালোপহেতু বৃষলত্ব প্রাপ্ত হইয়াছে। পৌণ্ড্রকদিগের সঙ্গে আর যে সকল জাতি গণনা করিয়াছেন, তাহাদিগের মধ্যে যবন ও পহ্লব ভারতবর্ষের বাহিরে। ভিতরে সকলগুলিই অনার্য্য; যথা—

“পৌণ্ড্রকাশ্চৌড্রদ্রবিড়াঃ কাম্বোজা যবনাঃ শকাঃ।

পারদাঃ পহ্লবাশ্চীনাঃ কিরাতা দরদাঃ খসাঃ॥”

ঐতরেয় ব্রাহ্মণে আছে, “অন্ধ্রা পুণ্ড্রা সবরা পুলিন্দা মুতিবা ইত্যুদন্তা বহবো ভবন্তি।” মহাভারতেও এই পুণ্ড্রদিগের কথা আছে। সভাপর্ব্বে আছে যে, ভীম দিগ্বিজয়ে আসিয়া পুণ্ড্রাধিপতি বাসুদেব এবং কৌশকিকচ্ছবাসী মনৌজা রাজা, এই দুই মহাবলপরাক্রান্ত বীরকে পরাজয় করিয়া বঙ্গরাজের প্রতি ধাবমান হইলেন। বঙ্গ আধুনিক বাঙ্গালার পূর্ব্বভাগকে বলিত। এখনও সাধারণ লোকে সেই প্রদেশকেই বঙ্গদেশ বলে। ভীম পশ্চিম হইতে আসিয়া যে দেশ জয় করিয়া বাঙ্গালার পূর্ব্বভাগে প্রবেশ করিলেন, সে দেশ অবশ্য বাঙ্গলার পশ্চিমভাগে। উইল্‌সন্ সাহেবও স্বকৃত বিষ্ণুপুরাণানুবাদে ভারতবর্ষের ভৌগোলিক তত্ত্ব নিরূপণকালে বাঙ্গালার পশ্চিমাংশেই পুণ্ড্রজাতিকে সংস্থাপন করিয়াছেন।[১১] তারপর খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে হিয়েন্থ্ সাঙ্ নামক চীন পরিব্রাজক এ প্রদেশে আসিয়া পুণ্ড্রদিগের রাজধানী পৌণ্ড্র বর্দ্ধন দেখিয়া গিয়াছেন। জেনারেল্ কানিংহাম্ সাহেব ঐ চীন পরিব্রাজকের লিখিত দিক্ ও দূরতা লইয়া পৌণ্ড্রবর্দ্ধন কোথায় ছিল, তাহা নিরূপণ করিবার চেষ্টা পাইয়াছেন। তিনি কিছু ইতস্ততঃ করিয়া আধুনিক পাবনাকে পৌণ্ড্রবর্দ্ধন বলিয়া স্থির করিয়াছেন। পাবনা না হইয়া বাঙ্গালার প্রাচীন রাজধানী মালদহ জেলার অন্তর্গত ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরী পাণ্ডুয়া বলিলে পৌণ্ড্রবর্দ্ধনের প্রকৃত সংস্থান ঘটিত। তারপর দশকুমারচরিতে লেখা আছে, “অনুজায় বিষাণবর্ম্মনে দণ্ডচক্রং চ পুণ্ড্রাভিযোগায় বিরোচেয়ং।” অর্থাৎ পুণ্ড্রদেশ আক্রমণের জন্য কনিষ্ঠ ভ্রাতা বিষাণবর্ম্মাকে দণ্ড চক্র অর্থাৎ সৈন্যাদি দিতে ইচ্ছা করিয়াছি।[১২] দশকুমারচরিত আধুনিক সংস্কৃত গ্রন্থ। উপরিলিখিত উক্তি কোন মৈথিল রাজার উক্তি, অতএব দশকুমার যখন প্রণীত হয়, তখনও পুণ্ড্রেরা মিথিলার নিকটবাসী।

অতএব দেখা যাইতেছে যে, ব্রাহ্মণ, ইতিহাস, স্মৃতি, এ সকলের সময় হইতে অর্থাৎ অতি পূর্ব্বকাল হইতে দশকুমারচরিত ও হিয়েন্থ্ সাঙের সময় পর্য্যন্ত পুণ্ড্রনামে প্রবল জাতি বাঙ্গালার পশ্চিমাংশে বাস করিত। এক্ষণে বাঙ্গালায় বা বাঙ্গালার নিকট বা ভারতবর্ষের কোন প্রদেশে পুণ্ড্র নামে কোন জাতি নাই। এই পুণ্ড্রজাতি তবে কোথায় গেল?

সংস্কৃত শব্দে “ণ্ড” থাকিলে, বাঙ্গালার প্রচলিত ভাষায় ড—কার, ড়—কার হইয়া যায়। আর ণ—কার লুপ্ত হইয়া পূর্ব্ববর্ত্তী হলবর্ণে চন্দ্রবিন্দুরূপে পরিণত হয়। যথা—ভাণ্ডের স্থলে ভাঁড়, ষণ্ডের স্থলে ষাঁড়, শুণ্ডের স্থলে শুঁড়। আর সংস্কৃত হইতে অপভ্রংশপ্রাপ্ত হইয়া বাঙ্গালাদিতে পরিণত হইতে গেলে শব্দের র—কারাদির সচরাচর লোপ হয়,—যথা—তাম্র স্থলে তামা, আম্র স্থলে আম ইত্যাদি। অতএব পুণ্ড্র শব্দ লৌকিক ভাষায় চলিত হইলে প্রথমে রেফ লুপ্ত হইয়া পুণ্ড শব্দে পরিণত হইবে। তারপর যেমন ভাণ্ড স্থলে ভাঁড় হয়, শুণ্ড স্থলে শুঁড় হয়, তেমনি পুণ্ড স্থলে পুঁড় বা পুঁড়ো হইবে। পুঁড়ো বাঙ্গালায় একটি সংখ্যায় প্রধান জাতি।

আমরা পূর্ব্বে যাহা উদ্ধৃত যাহা করিয়াছি, তাহাতে দেখা গিয়াছে যে, ঐতেরয় ব্রাহ্মণে ও মনুতে পুণ্ড্রেরা অনার্য্যজাতির সঙ্গে গণিত হইয়াছে। অতএব পুঁড়ো আর একটি অনার্য্যবংশোদ্ভূত বাঙ্গালী জাতি।

শব্দের অপভ্রংশ এক প্রকার হয় না। প্রাচীন ভাষার কোন শব্দ ভাষান্তরে অপভ্রংষ্ট হইয়া প্রবেশ করিলে দুই তিন রূপ ধারণ করে। এক সংস্কৃত ‘স্থান’ শব্দ বাঙ্গলা ভাষায় কোথাও থান, কোথাও ঠাঁই। ‘চন্দ্র’ শব্দ কখন চন্দর, কখন চাঁদ। যেমন চন্দ্র শব্দ বাঙ্গালীর উচ্চারণে চন্দর হয়, ভদ্র শব্দ ভদ্দর হয়, তন্ত্র শব্দ তন্তর হয়, তেমনি পুণ্ড্র শব্দ স্থানবিশেষে পুণ্ডর হইবে। জাতিবাচক অর্থে কখন কখন বাঙ্গালীরা শব্দের পরে একটা ঈকার বেশীর ভাগ যোগ করিয়া দিয়া থাকে; যেমন সাঁওতাল সাঁওতালী, গয়াল গয়ালী, দেশওয়াল হইতে দেশওয়ালী। এইরূপ ঈকার যোগে পুণ্ড্র শব্দ পুণ্ডর হইয়া পুণ্ডরীতে পরিণত হয়। পুণ্ডরী বলিয়া একটি বহুসংখ্যক বাঙ্গালী জাতি আছে, পুণ্ড্রেরা এবং পুঁড়োরা যদি অনার্য্য, তবে পুণ্ডরীরাও অনার্য্যজাতি।

পোদ শব্দ পুণ্ড্র শব্দ হইতে নিষ্পন্ন হইতে পারে। এবং পুণ্ড্র শব্দ হইতেই পোদ নাম জন্মিয়াছে, ইহা আমার বিশ্বাস হয়।

যে সকল কথা বলা গেল, তাহাতে বোধ হয় প্রতীতি জন্মিয়া থাকিবে যে, পুঁড়ো, পুণ্ডরী এবং পোদ, তিনটি আদৌ এক জাতি এবং তিনটি আদি প্রাচীন পুণ্ড্রজাতির সন্তান। পুণ্ড্রেরা অনার্য্যজাতি ছিল, অতএব বাঙ্গালী সমাজের ভিতর আর তিনটি অনার্য্যজাতি পাওয়া যাইতেছে।

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. বঙ্গদর্শন, ১২৮৮, বৈশাখ।
  2. Dalton, p. 299.
  3. Dalton, p. 145.
  4. Dalton, p. 293.
  5. Non—Aryan Dictionary, p. 29.
  6. Non—Aryan Dictionary, p. 29.
  7. “কিং করোমীতি তান্ সর্ব্বান্ বিপ্রান্ আহ সে চাতুরঃ।
    নিষীদেতি তমূচুস্তে নিষাদস্তেন সোহভবৎ॥”
  8. “তেন দ্বারেণ নিষ্ক্রান্ত তৎ পাপং তস্য ভূপতেঃ।
    নিষাদাস্তে তথা যাতা বেণকল্মষসম্ভবাঃ॥”
  9. “নিষাদবংশকর্ত্তাসৌ বভূব বদতাং বরঃ।
    ধীবরানসৃজচ্চাপি বেণকল্মষসম্ভবান্॥”
  10. “নিষাদো মার্গবং সূতে দাসং নৌকর্ম্মজীবিনং।
    কৈবর্ত্তমিতি যং প্রাহুরার্য্যাবর্ত্তনিবাসিনঃ॥”
      মনুসংহিতা, দশম অধ্যায়, ৩৪ শ্লোক।
  11. “Pundras the western Provinces of Bengal, or as sometimes used in a more comprehensive sense, it includes the following districts; Rajashahi, Dinagepore, and Rungpore; Nadiya, Beerbhoom, Burdwan, part of Midnapoor and the Jungle Mehals; Ramghur, Pacheti, Palamow, and part of Chunar. See an account of Pundra translated from what is said to be part of Brahmanda Section of the Bhavishyat Purana in the Quarterly Oriental Magazine, Decr. 1824. Wilson’s Vishnu Puranas.
    আমাদিগের প্রিয়বন্ধু পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ভবিষ্যপুরাণখানি সন্ধান করিয়া দেখিয়াছেন (ভবিষ্যপুরাণ, ভবিষ্যৎ পুরাণ নহে; ব্রহ্মাখণ্ড, ব্রহ্মাণ্ডখণ্ড নহে; এগুলি ছোট ছোট সাহেবী ভুল)। উহার এক কাপি সংস্কৃত কলেজে আছে। পুঁথিখানি খণ্ডিত; আসাম মণিপুর হইতে আরম্ভ করিয়া কাশী পর্য্যন্ত সমস্ত দেশের বিশেষ বিবরণ উহাতে দেওয়া আছে; কিন্তু গ্রন্থখানি পড়িয়া ভক্তি হয় না। গ্রন্থখানিতে বিদ্যাসুন্দরের গল্প আছে। মানসিংহ কর্ত্তৃক যশোহরের আক্রমণ বর্ণিত আছে। বিশেষ, গ্রন্থকারের বঙ্গদেশমধ্যে আসাম, চাট্টল এবং মণিপুর পর্য্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে। এতদূর ত গ্রন্থের পরিচয় গেল। তাহাতে আছে যে, পৌণ্ড্রদেশ সাত ভাগে বিভক্ত;—গৌড়দেশ, বারেন্দ্রভূমি, নীবৃত, বরাহভূমি, বর্দ্ধমান, নারীখণ্ড ও বিন্ধ্যপার্শ্ব। এই সকল দেশের লোক দুষ্ট, চোর পরদারনিরত ইত্যাদি ইত্যাদি। গৌড়দেশের প্রধান নগরসমূহের মধ্যে মৌরসিধাবাদ (মুরশিদাবাদ নামের সংস্কৃত ফরম; মুরশিদাবাদ নামে ১৭০৪ সালে হয়, তাহার আগে উহাকে মুকশুধাবাদ বলিত বলিয়া ষ্টুয়ার্টের হিষ্টরি অব্ বেঙ্গলে উক্ত আছে;) সুতরাং গ্রন্থখানি ২০০ বৎসরের মধ্যে লিখিত বলিয়া বোধ হয়। গৌড়দেশে গৌড়নগরের উল্লেখ নাই। পাণ্ডুয়ারও উল্লেখ নাই। বরেন্দ্রভূমির প্রধান নগর পুট্টিলা, নটারো, চপলা (যেখানকার রাজা ব্রাহ্মণ), কাকমারী। নীবৃত দেশের প্রধান নগর কচ্ছপ, নসর, শ্রীরঙ্গপুর ও বিহার। রঙ্গপুরে বাগদী রাজা। নারীখণ্ডের প্রধান নগর বৈদ্যনাথ, দেবগড় করে, সোণামুখী ইত্যাদি। বরাহভূমের প্রধান নগর রঘুনাথপুর, ধবল ইত্যাদি। বর্দ্ধমানের প্রধান নগর বর্দ্ধমান, নবদ্বীপ, মায়াপুর, কৃষ্ণনগর ইত্যাদি। বিন্ধ্যপার্শ্বের প্রধান নগর সুদর্শন, পুষ্পগ্রাম ও বদরী কুড়ক গ্রাম। এই সকল দেশের আচার ব্যবহার ও চতুঃসীমা আছে। আমাদের যতদূর মানচিত্র বোধ আছে, তাহাতে বোধ হয়, চতুঃসীমা অনেক ভজিবে না। গৌড়দেশের উত্তরে পদ্মাবতী ও দক্ষিণে বর্দ্ধমান। আসল গৌড়নগর ইহার মধ্যে পড়িল না।
    উইল্‌সন্ সাহেব ঐ স্থলে আরও লিখিয়াছেন যে, রামায়ণের কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে একচত্বারিংশৎ অধ্যায়ে দ্বাদশ শ্লোকে পুণ্ড্র দাক্ষিণাত্যে স্থাপিত বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে। ঐ শ্লোকটি আমরা উদ্ধৃত করিতেছি—
     “নদীং গোদাবরীং চৈব সর্ব্বমেবানুপশ্যতঃ।
     তথৈবান্ধ্রাংশ্চ পুণ্ড্রাংশ্চ চোলান্ পাণ্ড্রাংশ্চ কেরলান্॥”
  12. দশকুমারচরিত, তৃতীয় উচ্ছ্বাস।

Leave a Reply