জাগৃহি

[তোটক ছন্দ]
‘হর
হর হর শংকর হর হর ব্যোম’ –
একী
ঘন রণ-রোল ছায়া চরাচর ব্যোম!
হানে
ক্ষিপ্ত মহেশ্বর রুদ্র পিনাক,
ঘন
প্রণব-নিনাদ হাঁকে ভৈরব-হাঁক
ধু ধু
দাউ দাউ জ্বলে কোটি নর-মেধ-যাগ,
হানে
কাল-বিষ বিশ্বে রে মহাকাল-নাগ!
আজ
ধূর্জটি ব্যোমকেশ নৃত্য-পাগল,
ওই
ভাঙল আগল ওরে ভাঙল আগল!
বোলে
অম্বুদ-ডম্বুর কম্বু বিষাণ,
নাচে
থই-তাতা থই-তাতা পাগলা ঈশান!
দোলে
হিন্দোলে ভীম-তালে সৃষ্টি ধাতার,
বুকে
বিশ্বপাতার বহে রক্ত-পাথার!
ঘোর
নির্ঘোষে ‘মার মার’ দৈত্য, অসুর,
প্রেত,
রক্ত-পিশাচ, রণ-দুর্মদ সুর।
করে
ক্রন্দসী-ক্রন্দন অম্বর রোধ –
ত্রাহি
ত্রাহি মহেশ হে সম্বরো ক্রোধ!
সুত
মৃত্যু-কাতর, হাহা অট্টহাসি
হাসে
চণ্ডী চামুণ্ডা মা সর্বনাশী।
কাল-
বৈশাখী ঝঞ্ঝারে সঙ্গে করি –
রণ-
উন্মাদিনী নাচে রঙ্গে মরি!
উর-
হার দোলে নরমুণ্ড-মালা,
করে
খড়্গ ভয়াল, আঁখে বহ্নি-জ্বালা!
নিয়া
রক্তপানের কী অগস্ত্য-তৃষা
নাচে
ছিন্ন সে মস্তা মা, নাইকো দিশা!
‘দে রে
রক্ত দে রক্ত দে’ রণে ক্রন্দন,
বুঝি
থেমে যায় সৃষ্টির হৃৎ-স্পন্দন!
জ্বলে
বৈশ্বানরের ধু ধু লক্ষ শিখা,
আজ
বিষ্ণু-ভালে লাল রক্ত-টিকা!
শুধু
অগ্নি-শিখা ধু ধু অগ্নি-শিখা,
শোভে
করুণার ভালে লাল রক্ত-টিকা!
রণ-
শ্রান্ত অসুর-সুর-যোদ্ধৃ-সেনা,
শুধু
রক্ত-পাথার, শুধু রক্ত-ফেনা!
একী
বিশ্ব-বিধ্বংস নৃশংস খেলা,
কিছু
নাই কিছু নাই প্রেত-পিশাচে মেলা।
আজ
ঘরে ঘরে জ্বলে ধু ধু শ্মশান মশান –
হোক
রোষ অবসান, ত্রাহি ত্রাহি ভগবান!
আজি
বন্ধ সবার পূতি-গন্ধে নিশাস,
বিষে
বিশ্ব-নিসাড়, বহে জোর নাভিশ্বাস!
দেহো
ক্ষান্ত রণে, ফেলো রঙ্গিণী বেশ,
খোলো
রক্তাম্বর মাতা সম্বরো কেশ!
এ তো
নয় মাতা রক্তোন্মত্তা ভীমা!
আজ
জাগৃহি মা, আজ জাগৃহি মা।
তব
চরণাবলুণ্ঠিত মহিষ-অসুর,
হল
ধ্বংস অসুর, লীন শক্তি পশুর।
তবে
সম্বরো রণ, হোক ক্ষান্ত রোদন–
হোক
সত্য-বোধন আজ মুক্তি-বোধন!
এসো
শুদ্ধা মাতা এই কাল-শ্মশানে
আজ
প্রলয়-শেষে এই রণাবসানে!
জাগো
জাগো মানব-মাতা দেবী নারী!
আনো
হৈম ঝারি, আনো শান্তি-বারি!
এসো
কৈলাস হতে মা গো মানস-সরে,
নীল
উৎপল-দলে রাঙা আঁচল-ভরে।
এসো
কন্যা উমা, এসো গৌরী রূপে,–
বাজো
শঙ্খ শুভ, জ্বালো গন্ধ ধূপে!
আজ
মুক্ত-বেণি মেয়ে একাকী চলে,
ওই
শেফালি-তলে হেরো শেফালি-তলে।
ওড়ে
এলোমেলো অঞ্চল আশ্বিন-বায়,
হানে
চঞ্চল নীল চাওয়া আকাশের গায়!
ঘোষে
হিমালয় তার মহা হর্ষ-বাণী, –
এল
হৈমবতী, এল গৌরী রানি।
বাজো
মঙ্গল শাঁখ, হোক শুভ-আরতি,
এল
লক্ষ্মী-কমলা, এল বাণী-ভারতী।
এল
সুন্দর সৈনিক সুর কার্তিক,
এল
সিদ্ধি-দাতা, হেরো হাসে চারিদিক!
ভরা
ফুল-খুকি ফুল-হাসি শিউলির তল,
আজ
চোখে আসে জল, শুধু চোখে আসে জল!
নিয়া
মাতৃ-হিয়া নিয়া কল্যাণী-রূপ
এল
শক্তি স্বাহা, বাজো শাঁখ, জ্বালো ধূপ!
ভাঁজো
মোহিনী সানাই, বাজো আগমনি-সুর,
বড়ো
কেঁদে ওঠে আজ হিয়া মাতৃ-বিধুর।
ওঠে
কণ্ঠ ছাপি বাণী সত্য পরম –
বন্-
দে মাতরম্। বন্‌দে মাতরম্!