এক
সদাশিব মুখোপাধ্যায়। যখন জয়ন্ত ও মানিককে গোয়েন্দা বলে কেউ জানত না, তিনি তখন থেকেই বন্ধু।
জমিদার মানুষ। বাস করেন শিবপুরের গঙ্গার ধারে মস্ত এক বাড়িতে। জয়ন্ত ও মানিক আজ তার কাছে এসেছে সান্ধ্যভোজের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে।
তখন সন্ধ্যার শাঁখ বাজেনি। সদাশিববাবুর সাজানো গুছানো লম্বাচওড়া বৈঠকখানায় বসে জয়ন্ত ও মানিক গল্প করছে সকলের সঙ্গে। সকলে মানে, সদাশিববাবু ও তার কয়েকজন প্রতিবেশী বন্ধু। তারা আকৃষ্ট হয়েছেন ভূরিভোজনের লোভে নয়, জয়ন্তের নাম শুনেই। জয়ন্তের মুখে তার কোনও কোনও মামলার কথা শুনবেন, এই তাঁদের আগ্রহ।
কিন্তু জয়ন্তর আগ্রহ জাগ্রত হচ্ছে না নিজের মুখে নিজের কথা ব্যক্ত করবার জন্যে।
ভদ্রলোকেরা তবু নাছোড়বান্দা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কৌতূহলী হচ্ছেন আবার তিনকড়িবাবু, তিনি সদাশিববাবুর বাড়ির খুব কাছেই থাকেন। আগে কোনও সরকারি অফিসের কর্মচারী ছিলেন, এখন কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। বয়সে ষাট পার হয়েছে। বিপত্নীক ও নিঃসন্তান।
অবশেষে অনুরোধ উপরোধের ঠেলায় পড়ে জয়ন্ত বলতে বাধ্য হল? আচ্ছা, তাহলে এমন কোনও কোনও মামলার কথা বলতে পারি, যেগুলো আমি হাতে নিয়ে ব্যর্থ হয়েছি।
তিনকড়িবাবু বললেন, না-না, তাও কি হয়! আমরা আপনাদের সফলতার ইতিহাসই শুনতে চাই। ব্যর্থ মামলা তো অসমাপ্ত গল্প।
জয়ন্ত শেষে নাচার হয়ে বললে, মানিক, আমাকে রক্ষা করো ভাই! আমি নিজের গুণকীর্তন করতে পারব না কিছুতেই। তুমিই হয় ওঁদের দু-একটা মামলার কথা শোনাও।
তাই হল। জয়ন্তের কাহিনি নিয়ে মানিক ঘণ্টা দুই সকলকে মাতিয়ে রাখলে।
তারপর সদাশিবাবু ঘোষণা করলেন, আর নয় এইবার খাবার সময় হয়েছে।
আসর ভাঙল।
কিন্তু খেতে বসতে না বসতেই আকাশ বলে ভেঙে পড়ি। বজ্রের হুঙ্কার, ঝড়ের চিৎকার, গঙ্গার হাহাকার। বিদ্যুতের পর বিদ্যুতের অগ্নিবাণের আঘাতে কালো আকাশ যেন খানখান হয়ে গেল। তারপর ঝড় কাবু হতে না হতেই শুরু হল বৃষ্টির পালা। আর সে কি যে সে বৃষ্টি। দেখতে-দেখতে মাটির বুক হয়ে গেল জলে জলে জলময়!
সদাশিববাবু বললেন, জয়ন্ত, মানিক। আজ আর বাড়ি যাবার নাম মুখে এনো না। বাড়িতে ফোন করে দাও, আজ এখানেই তোমরা রাত্রিবাস করবে।