বিজ্ঞাপন

যে কয়েকটি ক্ষুদ্র কবিতা, এই কবিতাপুস্তকে সন্নিবেশিত হইল, প্রায় সকলগুলিই বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হইয়াছিল। একটি—“জলে ফুল” ভ্রমরে প্রকাশিত হয়। বাল্যরচনা দুটি কবিতা, বাল্যকালেই পুস্তকাকারে প্রচারিত হয়।

বাঙ্গালা সাহিত্যের আর যে কিছু অভাব থাকুক, গীতিকাব্যের অভাব নাই। বিদ্যাপতির সময় হইতে আজি পর্যন্ত, বাঙ্গালী কবিরা গীতিকাব্যের বৃষ্টি করিয়া আসিতেছেন। এমন সময়ে এই কয়খানি সামান্য গীতিকাব্য পুনর্মুদ্রিত করিয়া বোধ হয় জনসাধারণের কেবল বিরক্তিই জন্মাইতেছি। এ মহাসমুদ্রে শিশিরবিন্দুনিষেকের প্রয়োজন ছিল না। আমারও ইচ্ছা ছিল না। ইচ্ছা ছিল না বলিয়াই এতদিন এ সকল পুনর্মুদ্রিত করি নাই।

তবে কেন এখন এ দুষ্কর্মে প্রবৃত্ত হইলাম? একদা বঙ্গদর্শন আপিসে এক পত্র আসিল–তাহাতে কোন মহাত্মা লিখিতেছেন যে, বঙ্গদর্শনে যে সকল কবিতা প্রকাশ হইয়াছিল, তাহার মধ্যে কতকগুলি পুনর্মুদ্রিত হয় নাই। তিনি সেই সকল পুনর্মুদ্রিত করিতে চাহেন। অন্যে মনে করিবেন যে, রহস্য মন্দ নহে। আমি ভাবিলাম, এই বেলা আপনার পথ দেখা ভাল, নহিলে কোন দিন কাহার হাতে মারা পড়িব। সেই জন্য পাঠককে এ যন্ত্রণা দিলাম। বিশেষ যাহা প্রচারিত হইয়াছে, ভাল হউক, মন্দ হউক, তাহার পুনঃপ্রচারে নূতন পাপ কিছুই নাই। অনেক প্রকার রচনা সাধারণসমীপস্থ করিয়া আমি অনেক অপরাধে অপরাধী হইয়াছি; শত অপরাধের যদি মার্জনা হইয়া থাকে, তবে আর একটি অপরাধেও মার্জনা হইতে পারে।

কবিতাপুস্তকের ভিতর তিনটি গদ্য প্রবন্ধ সন্নিবেশিত হইয়াছে। কেন হইল, আমাকে জিজ্ঞাসা করিলে আমি ভাল করিয়া বুঝাইতে পারিব না। তবে, এক্ষণে যে রীতি প্রচলিত আছে যে, কবিতা পদ্যেই লিখিত হইবে, তাহা সঙ্গত কি না, আমার সন্দেহ আছে। ভরসা করি, অনেকেই জানেন যে, কেবল পদ্যই কাব্য নহে। আমার বিশ্বাস আছে যে, অনেক স্থানে পদ্যের অপেক্ষা গদ্য কাব্যের উপযোগী। বিষয়বিশেষে পদ্য কাব্যের উপযোগী হইতে পারে, কিন্তু অনেক স্থানে গদ্যের ব্যবহারই ভাল। যে স্থানে ভাষা ভাবের গৌরবে আপনা আপনি ছন্দে বিন্যস্ত হইতে চাহে, কেবল সেই স্থানেই পদ্য ব্যবহার্য। নহিলে কেবল কবিনাম কিনিবার জন্য ছন্দ মিলাইতে বসা এক প্রকার সং সাজিতে বসা। কাব্যের গদ্যের উপযোগিতার উদাহরণ স্বরূপ তিনটি গদ্য কবিতা এই পুস্তকে সন্নিবেশিত করিলাম। অনেকে বলিবেন, এই গদ্যে কোন কবিত্ব নাই। সে কথায় আমার আপত্তি নাই। আমার উত্তর যে, এই গদ্য যেরূপ কবিত্বশূন্য, আমার পদ্যও তদ্রূপ। অতএব তুলনায় কোন ব্যাঘাত হইবে না।

অন্য কবিতাগুলি সম্বন্ধে যাহাই হউক, যে দুইটি বাল্যরচনা ইহাতে সন্নিবেশিত করিয়াছি, তাহার কোন মার্জনা নাই। ঐ কবিতাদ্বয়ের কোন গুণ নাই। ইহা নীরস, দুরূহ, এবং বালকসুলভ অসার কথায় পরিপূর্ণ। যখন আমি কালেজের ছাত্র, তখন উহা প্রথম প্রচারিত হয়। পড়িয়া উহার দুরূহতা দেখিয়া, আমার একজন অধ্যাপক বলিয়াছিলেন, “ওগুলি হিয়ালি।” অধ্যাপক মহাশয় অন্যায় কথা বলেন নাই। ঐ প্রথম সংস্করণ এখন আর পাওয়া যায় না—অনেক কাপি আমি স্বয়ং নষ্ট করিয়াছিলাম। এক্ষণে আমার অনেকগুলি বন্ধু, আমার প্রতি স্নেহবশতঃ ঐ বাল্যরচনা দেখিতে কৌতূহলী। তাঁহাদিগের তৃপ্ত্যার্থই এই দুইটি কবিতা পুনর্মুদ্রিত হইল।

দ্বিতীয় বারের বিজ্ঞাপন

বাঙ্গালা কবিতা পুনর্মুদ্রিত করিবার জন্য পাঠকের কাছে ক্ষমা চাহিতে হয়। তবে সাহিত্য সম্বন্ধে অনেকে অনেক অপরাধ করিতেছেন, সে সকল পাঠক যদি ক্ষমা করেন, আমার এ অপরাধও ক্ষমা করিবেন।

ক্ষমার একটু কারণ এই আছে যে, এবার একটি গদ্য প্রবন্ধ নূতন দেওয়া গেল। “পুষ্পনাটক” প্রথম “প্রচারে” প্রকাশিত হইয়াছিল, এই প্রথম পুনর্মুদ্রিত হইল।

“দুর্গোৎসব” “বঙ্গদর্শন” হইতে এবং “রাজার উপর রাজা” “প্রচার” হইতে পুনর্মুদ্রিত করা গেল। “কবিতাপুস্তক” অপেক্ষা “গদ্যপদ্য” নামটি এই সংগ্রহের উপযোগী, এই জন্য এইরূপ নামের কিছু পরিবর্তন করা গেল।

ভাগসমূহ

Leave a Reply