চক্রবাক

কাজী নজরুল ইসলামের ‘চক্রবাক’ কাব্যগ্রন্থ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে মুতাবিক ১৯২৯ খৃষ্টাব্দের আগস্টে; প্রকাশক শ্রীগোপালদাস মজুমদার; ডি. এম. লাইব্রেরি, ৬১ কর্ণওয়ালিস্ ষ্ট্রীট, কলিকাতা। প্রবাসী প্রেস, ৯১ আপার সার্কুলার রোড, কলিকাতা হতে শ্রীসজনীকান্ত দাস কর্তৃক মুদ্রিত; পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪+৭৮; মূল্য ১৷৷৹ (দেড় টাকা)।

১৯২৯ সালের জানুয়ারিতে কাজী নজরুল ইসলাম আবার চট্টগ্রামে আসেন এবং তামাককুণ্ডীতে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য, এর আগে ১৯২৬ সালে জুলাই মাসে তিনি চট্টগ্রাম এসেছিলেন, সে সময়ে ‘সিন্ধু হিন্দোল’ কাব্যের কবিতাগুলো রচিত হয়েছিল। এবারের সফরে তিনি ‘চক্রবাকে’র সূচনা কবিতা ‘ওগো চক্রবাকী’, ‘বাদল-রাতের পাখি’, ‘স্তব্ধ-রাতে’, ‘বাতায়ন-পাশে গুবাক তরুর সারি’, ‘কর্ণফুলী’, ‘শীতের সিন্ধু’ এবং অন্যান্য গ্রন্থভুক্ত আরও কিছু কবিতা ও গান রচনা করেন। অধ্যাপিকা সেলিনা বাহার জামানের নিকট রক্ষিত পাণ্ডুলিপিতে দেখা যায়— ‘শীতের সিন্ধু’ কবিতাটি ‘সিন্ধু-চতুর্থ তরঙ্গ’ রূপে রচিত হয়। মনে হয়, ছন্দের পার্থক্যের কারণে পরে কবি এর ভিন্ন নাম দেন।

‘চক্রবাক’ কাব্যে ‘উৎসর্গ’ ও গোড়ার শিরোনামহীন কবিতাটি ছাড়া এই একুশটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল— ১. তোমারে পড়িছে মনে, ২. বাদল-রাতের পাখি, ৩. স্তব্ধরাতে, ৪. বাতায়ন-পাশে গুবাক তরুর সারি, ৫. কর্ণফুলী, ৬. শীতের সিন্ধু, ৭. পথচারী, ৮. মিলন-মোহানায়, ৯. গানের আড়াল, ১০. ভীরু, ১১. এ মোর অহঙ্কার, ১২. তুমি মোরে ভুলিয়াছ, ১৩. হিংসাতুর, ১৪. বর্ষা-বিদায়, ১৫. সাজিয়াছ বর মৃত্যুর উৎসবে, ১৬. অপরাধ শুধু মনে থাক্, ১৭. আড়াল, ১৮. নদীপারের মেয়ে, ১৯. ১৪০০ সাল, ২০. চক্রবাক ও ২১. কুহেলিকা।

‘ভীরু’ ও ‘এ মোর অহঙ্কার’ কবিতা দুটি পূর্ববর্তী ‘জিঞ্জির’ কাব্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, তাই ‘বাংলা একাডেমি’ প্রকাশিত ‘নজরুল রচনাবলী’তে কবিতা দু’টি ‘চক্রবাক’ কাব্য হতে বর্জিত হয়েছে। কিন্তু কবিতা দুটির ভাব ও বিষয় ‘চক্রবাক’ কাব্যের সাথেই বেশি সাজুস্যপূর্ণ বিবেচনা করে, বর্তমান সংস্করণে কবিতা দুটিকে ‘চক্রবাক’ কাব্যভুক্ত করা হয়েছে।

‘জিঞ্জির’ কাব্যভুক্ত ‘এ মোর অহঙ্কার’ কবিতাটিতে ১৩টি স্তবক; কিন্তু ‘চক্রবাক’ কাব্যে এর ষষ্ঠ স্তবক বর্জিত হয়েছিল। বর্তমান সংস্করণে ‘জিঞ্জির’ কাব্যের পাঠানুসারে ১৩ স্তবকের পূর্ণাঙ্গ কবিতাটি গ্রহণ করা হয়েছে।

‘তোমারে পড়িছে মনে’ ১৩৩৫ ভাদ্রের ‘ধূপছায়া’য় প্রকাশিত হয়েছিল।

‘স্তব্ধরাতে’ ১৩৩৫ মাঘের ‘ধূপছায়া’য় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।

‘বাতায়ন-পাশে গুবাক তরুর সারি’ ১৩৩৫ চৈত্রের কালিকলমে প্রকাশিত হয়েছিল, রচনার স্থান ও তারিখ লেখা ছিল— ‘চট্টগ্রাম, ২৪-১-২৯।’

‘কর্ণফুলী’ সাপ্তাহিক ‘আত্মশক্তি’তে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।

‘পথচারী’ ১৩৩৬ জ্যৈষ্ঠের ‘উপাসনা’য় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।

‘গানের আড়াল’ ১৩৩৫ অগ্রহায়ণ-পৌষের ধূপছায়ায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।

‘তুমি মোরে ভুলিয়াছ’ ১৩৩৫ বৈশাখের ‘সওগাতে’ ‘রহস্যময়ী’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। এ-সম্পর্কে কবি কলিকাতা হতে ৩১-৩-১৯২৮ তারিখের এক পত্রে ঢাকায় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন সাহেবকে লিখেন—

“আমি আবার বিষ্যুৎবার কলকাতা ফিরে আসব। সেদিন সন্ধ্যায় Broadcusting-এ আমার গান গাইতে হবে। … আমি বিষ্যুবারে দুটো গান ও আমার নতুন কবিতা ‘রহস্যময়ী’ আবৃত্তি করব। ‘রহস্যময়ী’ চৈত্রের সওগাতে বেরুবে। এর ‘তুমি মোরে ভুলিয়াছ’ নামটা বদলে ‘রহস্যময়ী’ করেছি।

—[নজরুল-জীবনে প্রেমের এক অধ্যায়, ৬৩ পৃ.]

‘হিংসাতুর’ ১৩৩৫ জ্যৈষ্ঠের ‘সওগাতে’ প্রথম প্রকাশিত হয়। এর রচনা স্থান ও তারিখ — ‘কলিকাতা, ২৯-৩-২৮।’ এই কবিতাটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেই কবি তাঁর প্রথমা (পরিত্যক্তা) পত্নীকে কলিকাতা হতে ১-৭-৩৭ তারিখে এক পত্রের শেষে P.S. (পুনশ্চ) দিয়ে লিখেছেন—

“আমার ‘চক্রবাক’ নামক কবিতা-পুস্তকের কবিতাগুলো পড়েছ? তোমার বহু অভিযোগের উত্তর পাবে তাতে। তোমার কোনো পুস্তকে আমার সম্বন্ধে কুটক্তি ছিল।”

—[নজরুল-রচনা-সম্ভার, প্রথম সংস্করণ, ২৩৮ পৃ.]

‘বর্ষা-বিদায়’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৩৫ ভাদ্রের ‘সওগাতে’।

‘সাজিয়াছ বর মৃত্যুর উৎসবে’ ‘প্রগতি’র বৈশাখ ১৩৩৫ সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।

‘আড়াল’ ১৩৩৬ আষাঢ়ের ‘কল্লোলে’ প্রথম প্রকাশিত হয়।

‘নদীপারের মেয়ে’ ১৩৩৫ বৈশাখের ‘কালিকলমে’ প্রথম প্রকাশিত হয়।

‘১৪০০ সাল’ ১৩৩৪ আষাঢ়ের ‘কল্লোলে’ ‘আজি হতে শতবর্ষ আগে’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। কল্লোল হতে এটি ১৩৩৪ আষাঢ়ের ‘নওরোজে’ উদ্ধৃত হয়েছিল। কবিতাটি ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে’র ‘১৪০০’ সাল কবিতার জবাবে লিখিত হয়েছিল।

‘কুহেলিকা’ ১৩৩৫ মাঘের মোয়াজ্জিনে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।