বামুনের মেয়ে

বামুনের মেয়ে উপন্যাস শিশির পাবলিশিং হাউস কর্তৃক প্রকাশিত ‘উপন্যাস সিরিজে’র দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম উপন্যাস (ক্রমিক নং-১৩) হিসাবে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশকাল—আশ্বিন, ১৩২৭ বঙ্গাব্দ। পরে গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স এই গ্রন্থটি পুনপ্রকাশ করে।

বামুনের মেয়ে উপন্যাসে শরৎচন্দ্র যে চিত্র এঁকেছেন, তাতে নারীর প্রতি তাঁর চিরায়ত মমত্ববোধ লক্ষ্যণীয়। তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন, জাতিভেদে নিমজ্জিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দু সমাজ ব্যবস্থায় প্রেম-ভালবাসা নিতান্তই গুরুত্বহীন; সেখানে ব্যক্তিমানসের উদারতা নির্ধারিত হয় তার সামাজিক অবস্থান দিয়ে এবং ধর্মীয় জাতিভেদ কিভাবে মনুষ্য সমাজকে অবদমিত করে রেখেছে, কিভাবে একটি সুন্দর সংসার, একটি মানুষের নির্ঝঞ্ঝাট জীবনাচারকে বিষিয়ে তুলেছে।

বামুনের মেয়ে উপন্যাসে তৎকালীন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সামাজিক গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও জাতিভেদের কথা অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। গল্পের শুরু হয়েছে গ্রামের বৃদ্ধা—কুসংস্কারাচ্ছন্ন রাসমণিকে দিয়ে। দুলে জাতের এক মেয়ে তার নাতনীর পাশ দিয়ে হেটে গেছে বলে তিনি দুলে মেয়েটিকে গালমন্দ করেছেন এবং জগদ্ধাত্রী ও তার মেয়ে সন্ধ্যাকে নিচু জাতের মেয়েছেলে রাখার জন্য গালমন্দ করতে করতে নিজের নাতনীকে স্নান করাতে নিয়ে যাচ্ছেন।

এরপর একে একে উপন্যাসের চরিত্রগুলো উঠে আসে—অরুণ, গোলক চাটুজ্যে, প্রিয় মুখেজ্যে। অরুণ একজন নীচু জাতের তরুণ, অতি সম্প্রতি সে বিদেশে গিয়ে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে। প্রিয় মুখুজ্যে গল্পের নায়িকা বামুনের মেয়ে সন্ধ্যার বাবা। ঔষধপত্র আর রোগী ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর অবসর নেই তার।

উপন্যাসের মোড় ঘোরানো চরিত্র গোলক মুখজ্যে—কথায় কথায় ‘মধুসূদন! তুমিই ভরসা’ বলা তার অভ্যাস। শুরুতে তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ একজন ধার্মিক ব্যক্তির মত মনে হলেও ধীরে ধীরে পাঠকের কাছে তার মুখোশ উন্মোচিত হয়ে ওঠে।

বিদ্বেষবশতঃ গোলক মুখুজ্যে খুঁজে বের করেন যে সন্ধ্যার বাবা প্রিয় মুখুজ্যে আদতেই ব্রাহ্মণের সন্তান নয়। তার মায়ের সাথে কুলীন ব্রাহ্মণের বিবাহ হলেও তিনি মূলত একজন নাপিতের সন্তান। উপন্যাসের সবচেয়ে পড় ট্রাজেডি এখানেই।