লঘুললিত
স্ত্রী। হইয়াছে জল
বড়ই শীতল,
ছুঁইলে বিকল, হইতে হয়।
আগে যে জীবন,
জুড়াত জীবন,
সে বন এখন, নাহিক সয়।।
সুখদ মলয়,
হইলেক লয়,
এলো হিমালয়, শীতল অতি।
পদার্থ সকল,
সমীরণ জল,
কি কাল শীতল, হলো সম্প্রতি।।
সকল শীতল,
করয় বিকল,
কিন্তু অপরূপ, নিরখি তায়।
সমস্ত শীতল,
প্রতপ্ত কেবল,
বোধ হয় প্রাণ, তোমার গায়।।
পতি। মোরে নিরন্তর,
তব নেত্রকর,
পাবক প্রখর, দাহন করে।
মম দেহোপর,
বহ্নি খর তর,
তাই উষ্ণভাব, এ দেহ ধরে।।
স্ত্রী।কেন বিভাবরী,
দীর্ঘ দেহ ধরি,
ধরায় বিহরি, রহে এখন।
ত্যজিতে ধরণী,
না চায় রজনী,
বল গুণমণি, শুনি কারণ।।
পতি। নয়ন মুদিয়ে,
থাক ঘুমাইয়ে,
তখনি হেরিয়ে, তোমার মুখ।
সতী বিভাবরী,
শশী জ্ঞান করি,
হেরি প্রাণপতি, পায় কি সুখ।।
আছে যতক্ষণ,
শশী প্রাণধন,
পাইয়ে রতন, না ত্যজে তায়।
তাই বিভাবরী,
পতি বোধ করি,
বহুক্ষণ ধরি, রয় ধরায়।।
কিন্তু লো যেক্ষণে,
নিদ্রার ভঞ্জনে,
চাহিয়া নয়নে, উঠ প্রভাতে।
হেরি ও নয়নে,
নিশা ভাবি মনে,
কুমুদী সতিনী, পালায় তাতে।।
স্ত্রী। অতিশয় ঘন,
বল কি কারণ
নিরখি প্রভাতে, এ কুজ্ঝটিকা।
কেন সব হয়,
ধূমাকার ময়,
কি ধূম হইল, ধরা ব্যাপিকা।।
পতি। এবে আর দর্প,
না করে কন্দর্প,
তাহার কারণ, শুন ইহায়।
তব নিকেতন,
আসিল মদন,
আপন যাতন, দিতে তোমায়।।
কিন্তু তব স্থান,
হরের সমান,
যে বহ্নি নয়নে, সে ভস্ম হয়।
তাই ধনি তার,
শক্তি সে প্রকার,
অবনীতে আর, নাহিক রয়।।
ভস্ম হৈল শর,
তার কলেবর,
প্রবল দহনে, দাহন হয়।
দাহনে ধূম,
ব্যাপে নভোভূম,
ভ্রমেতে কুআশা, লোকে কয়।।
স্ত্রী। কি কারণ প্রাণ,
শঙ্কর সমান,
মোরে কর জ্ঞান, উন্মত্ত প্রায়।
কোথায় কি মম,
হের হর সম,
তোমারে বুঝাতে, হইল দায়।।
পতি। বিবেচনা করি,
তোরে প্রাণেশ্বরী,
বলি ত্রিপুরারি, প্রলাপ নয়।
হরের ভূষণ,
সব বিলক্ষণ,
তোমার অঙ্গেতে, তুলনা হয়।।
হরের ইন্দুর,
সমান সিন্দূর
শিরে লো তোমার, কি শোভা পায়।
সদা, শিরোপরি,
আছ সিঁথিপরি,
তিন ধারা ধরি, গঙ্গা খেলায়।।
স্কন্ধ শিরোপরে,
হরের বিহরে,
সদা ফণিবরে, ভীষণ অতি।
বেণী ফণিবর,
তব নিরন্তর,
স্কন্ধ শিরোপর, রয় তেমতি।।
যেইমত হরে,
কণ্ঠে বিষধরে,
তেমতি গরল, তুমিও ধর।
কিন্তু কণ্ঠে নয়,
কিছু অধো রয়,
বিশেষিয়া বলি, ও পয়োধর।।
যে গরল হরে,
কণ্ঠদেশে ধরে,
কাছে না এনে সে নাশিতে নারে।
কিন্তু পয়োধরে
যে গরল ধরে,
দূর হইতেই, মানবে মারে।।
যদি বল প্রিয়ে,
কণ্ঠে না রহিয়ে
অধোভাগে কেন, গরল রয়।
কণ্ঠে রৈলে তবে
মুখ কাছে রবে,
মুখামৃতে বিষ, নিস্তেজ হয়।।
স্ত্রী। কি মূঢ় মানব
কোলে নিজ সব,
দুরন্ত পাবক, লয়েছে টানি।
বিশ্বাসঘাতক,
সেই সে পাবক,
করিবে দহন, তাহা না জানি।।
পতি। দোষ দাও পরে,
নিজ দোষোপরে,
দৃষ্টি নাহি কর, কি অপরূপ।
আপনি কেমনে
আপন নয়নে,
রেখেছো অনল, কহ স্বরূপ।।
স্ত্রী। তবে প্রেমাধার
রাখিব না আর,
নয়নে আমার, কাল অনল।
দেখ প্রাণ ধন,
মুদিয়া নয়ন,
তাড়াই আগুন, শয্যায় চল।।
পতি। যদি তুমি প্রাণ
নাহি দিলে স্থান,
কোথায় অনল, যাইবে আর।
পৃথিবীতে আর,
স্থান নাহি তার,
তাহে বলী শীত, বিপক্ষ তার।।
যাইবে যথায়,
যাইবে তথায়,
দুরন্ত শাত্রব, শীত ধাইয়ে।
এমতে ধরায়,
নাহি স্থান পায়,
শেষে জলে যায়, রয় ডুবিয়ে।।
তাই দেখ কাল,
নিশা শেষকাল,
উঠে জল হোতে, ধূমের রাশি।
তাই বলি প্রিয়ে,
স্থান না পাইয়ে,
হয়েছে অনল, সলিল বাসি।।
-‘সংবাদ প্রভাকর’, ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৩