আগমনী

এ কী
রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন –
ঝন
রনরনরন ঝনঝন!
সে কী
দমকি দমকি
ধমকি ধমকি
দামা দ্রিমি দ্রিমি গমকি গমকি
  
ওঠে চোটে, চোটে,
ছোটে লোটে ফোটে!
  
বহ্নি ফিনিক চমকি চমকি
  
ঢাল-তলোয়ারে খনখন!
সদা
গদা ঘোরে বোঁও বনবন
  
শোঁও শনশন!
এ কী
রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন –
  
রণ ঝনঝন ঝন রণরণ!

  

হৈ
হৈ রব
ভৈরব
হাঁকে
লাখে লাখে
ঝাঁকে
ঝাঁকে ঝাঁকে
লাল
গৈরিক-গায় সৈনিক ধায় তালে তালে
পালে পালে,
  
ধরা কাঁপে কাঁপে।
জাঁকে
মহাকাল কাঁপে থরথর!
রণে
কড়কড়কাড়া খাঁড়া-ঘাত,
শির
পিষে হাঁকে রথ-ঘর্ঘরধ্বনি ঘরঘর!
‘গর
গরগর’ বোলে ভেরি তূরী।
‘হর
হরহর’
করি
চিৎকার ছোটে সুরাসুর-সেনা হনহন!
ওঠে
ঝঞ্ঝা ঝাপটি দাপটি সাপটি
  
হুহু হুহু হুহু শনশন!
ছোটে
সুরাসুর সেনা হনহন।
বোঁও
বনবন
শোঁও
শনশন
হো-হো
ঝনন ননন রনঝনঝন রনননরন ঝনরন!
তাতা
থইথই খল খল খল
নাচে
রণরঙ্গিণী সঙ্গিনী সাথে,
  
ধকধক জ্বলে জ্বলজ্বল!
বুকে
মুখে চোখে রোষ-হুতাশন!
রোস
কথা শোন!
ওই
ডম্বরু-ঢোলে ডিমিডিমি বোলে,
  
ব্যোম মরুৎ স-অম্বর দোলে,
  
যম বরুণ কী কলকল্লোলে চলে উতরোলে
  
ধ্বংসে মাতিয়া  তাথিয়া তাথিয়া
  
নাচিয়া রঙ্গে, চরণ ভঙ্গে
  
সৃষ্টি সে টলে টলমল!
ও কী
বিজয়ধ্বনি সিন্ধু গরজে কলকল কল কলকল!
ওঠে
কোলাহল
কূট
হলাহল
ছোটে
মন্থনে পুন রক্ত-উদধি
  
ফেনাবিষ ক্ষরে গলগল!
টলে
নির্বিকার সে বিধাতৃরও গো
  
সিংহ-আসন টলমল!
কার
আকাশ-জোড়া ও আনত নয়ানে
  
করুণা-অশ্রু ছলছল!

  

বাজে
মৃত-সুরাসুর-পাঁজরে ঝাঁঝর ঝমঝম,
নাচে
ধূর্জটি সাথে প্রমথ ববম বমবম!
লাল
লালে লাল ওড়ে ঈশানে নিশান যুদ্ধের,
ওঠে
ওংকার, রণ-ডঙ্কার,
নাদে
ওম্ ওম্ মহাশঙ্খ-বিষাণ রুদ্রের।
ছোটে
রক্ত ফোয়ারা বহ্নির বান রে!
কোটি
বীরপ্রাণ
ক্ষণে
নির্বাণ
তবু
শত সূর্যের জ্বালাময় রোষ
  
গমকে শিরায় গমগম।
ভয়ে
রক্ত-পাগল প্রেত-পিশাচেরও
  
শিরদাঁড়া করে চনচন !
যত
ডাকিনী-যোগিনী বিস্ময়াহতা,
  
নিশীথিনী ভয়ে থমথম।
বাজে
মৃত সুরাসুর-পাঁজরে ঝাঁঝর ঝমঝম!

  

ওই
অট্টহাসিছে রণচামুণ্ডা হাহা হাহা হিহি হিহি,
মাঝে
মাঝে হুংকারে বৃংহিত নাদ
  
হ্রেষারব চিঁহি চিঁহিচিঁহি।
  
           বজ্রের মার
  
           করকা-পাত!
  
           কর্ আঘাত
  
           কর্ নিপাত,
  
           বহ্নিঘাত
  
    মারের ওপরে মার হানো,
  
           বাঃ সাবাস্!
  
    হাসো! – কাঁপে দেখো ভয়ে? যেন শীতে
  
    হিহি ইহি ইহি! কটকটকট পটপটপট
  
    গিরা ছিঁড়ে হাহা নড়ে ছটফট!
  
    হুর্‌র্! হুর্‌র্!! হুর্‌র্!!!
  
    হো হো কাটা পাঁঠা যেন ধড়ফড়
করে
দূর্‌র্! দূর্‌র্!! দূর্‌র্!!!
ওই
ওঠে দানবেরা ঘন চিৎকারি
  
ধিক্কারি পুন হানে টিটকারি রে!
যেন
কোটি নাগ-বিষ-ফুৎকারে
ওঠে
মৃত্যুআহত নিশাসে নিশাসে ঘুৎকার।
নর-
মুণ্ডমালিনী চণ্ডী হাসিছে হাহা হাহা হাহা হিহিহিহি
হোহো
হাহা হাহা হাহা হিহিহিহি।
ওই
অসুর-পশুর মিথ্যা দৈত্য সেনা যত
হত
আহত করে রে দেবতা সত্য!
  
স্বর্গ মর্ত্য পাতাল মাতাল রক্ত-সুরায়;
  
ত্রস্ত বিধাতা, মস্ত পাগল
  
পিনাকপাণি স-ত্রিশূল প্রলয় হস্ত ঘুরায়!
  
ক্ষিপ্ত সবাই রক্ত-সুরায়॥
  
চিতার উপরে চিতা সারি সারি
  
চারিপাশে তারই
  
ডাকে কুক্‌কুর গৃধিনি শৃগাল!
  
প্রলয় দোলায় দুলিছে ত্রিকাল
  
প্রলয়-দোলায় দুলিছে ত্রিকাল!!

  

আজ
রণ-রঙ্গিণী জগৎমাতার দেখ্ মহারণ
  
দশদিকে তাঁর দশহাতে বাজে দশ প্রহরণ!
  
পদতলে লুটে মহিষাসুর,
  
মহামাতা ওই সিংহাবাহিনী জানায় আজিকে বিশ্ববাসীকে –
  
শাশ্বত নহে দানব-শক্তি, পায়ে পিষে যায় শির পশুর!

  

  
           নাই দানব
  
           নাই অসুর–
  
           চাইনে সুর
  
           চাই মানব!–
  
    বরাভয়-বাণী ওই রে কার
  
    শুনি, নহে হইরই এবার!

  

  
           ওঠ রে ওঠ
  
           ছোট রে ছোট!
  
           শান্ত মন,
  
           ক্ষান্ত রণ!

  

  
           খোল তোরণ,
  
           চল বরণ
  
           করব মায়;
  
           ডরব কায়?
  
    ধর্‌ব পায় কার সে আর
  
    বিশ্ব-মা-ই পার্শ্বে যার?
আজ
আকাশ-ডোবানো নেহারি তাঁহারই চাওয়া,
ওই
শেফালিকা-তলে কে বালিকা চলে?
  
কেশের গন্ধ আনিছে আশিন হাওয়া।
  
এসেছে রে সাথে উৎপলাক্ষী চপলা কুমারী কমলা ওই,
  
সরসিজ-নিভ শুভ্র বালিকা
  
এল বীণাপাণি অমলা ওই।
  
এসেছে গণেশ,
  
এসেছে মহেশ,
  
বাস্ রে বাস্!
  
জোর উছাস্!!
  
এল সুন্দর সুর সেনাপতি,
  
সব মুখ এ যে চেনা-চেনা অতি
  
বাস্ রে বাস্    জোর উছাস্!!
  
হিমালয়! জাগো! ওঠো আজি,
  
তব সীমা লয় হোক
  
ভুলে যাও শোক – চোখে জল রোক
  
শান্তির – আজি শান্তি-নিলয় এ আলয় হোক্!
  
ঘরে ঘরে আজি দীপ জ্বলুক
  
মা-র আবাহন-গীত চলুক!
  
    দীপ জ্বলুক!
  
    গীত চলুক!!
আজ
কাঁপুক মানব-কলকল্লোলে কিশলয় সম নিখিল ব্যোম!
  
    স্বা-গতম্
  
    স্বা-গতম্!!
  
    মা-তরম্!
  
    মা-তরম্!!
  
ওই ওই ওই বিশ্বকণ্ঠে
  
বন্দনা-বাণী লুণ্ঠে – ‘বন্দে
  
    মা-তরম্!!