চতুর্থ পরিচ্ছেদ : দ্বীপে
সুন্দরবাবু তার অটোমেটিক বন্দুক ছুড়লেন–এক সেকেন্ডের মধ্যে সেই সাংঘাতিক আধুনিক মারণাস্ত্রের গর্ভ থেকে বেরিয়ে হুড়হুড় করে বয়ে গেল অনেকগুলো গুলির ঝড়।
কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সমুদ্রের বুকে ভাসন্ত সেই আশ্চর্য জীবিত বা মৃত দেহটা জলের তলায় অদৃশ্য হল!
সুন্দরবাবু বন্দুক নামিয়ে বললেন, হুম। আমার লক্ষ্য অব্যর্থ। বেটার গা নিশ্চয় ঝাঁঝরা হয়ে গেছে।
জয়ন্ত বললে, আমার বোধহয় গুলি লাগবার আগেই ও আপদটা সমুদ্রে ডুব মেরেছ!
বিমল বললে, আমারও সেই বিশ্বাস।
কুমার বললে, মড়াটা খালি জ্যান্ত নয়, বেজায় ধূর্ত!
মানিক বললে, ও হয়তো এখন ডুব সাঁতার দিচ্ছে!
রামহরি বললে, রাম, রাম, রাম, রাম! পিশাচকে ঘাঁটিয়ে ভালো কাজ হল না।
সুন্দরবাবু বললেন, অমরই বলো, জ্যান্ত মড়াই বলো আর পিশাচই বলো, অটোমেটিক বন্দুকের কাছে কোনও বাবাজির কোনওই ওস্তাদি খাটবে না। এতক্ষণে বেটার দেহ ভেঙে গুঁড়ো হয়ে অতলে তলিয়ে গেছে।
কিন্তু সুন্দরবাবুর মুখের কথা ফুরুতে-না-ফুরুতেই সেই রক্তশূন্য সাদা দেহটা হুশ করে আবার ভেসে উঠল! তার মুখে ভয়ের বা রাগের কোনও চিহ্নই নেই এবং তার ভাবহীন ও পলকহীন চোখদুটো আগেকার মতোই বিস্ফারিত হয়ে তাকিয়ে আছে জাহাজের দিকে!
রামহরি আর সে দৃশ্য সইতে পারলে না, ওঠে-কি-পড়ে এমনি বেগে ছুটে আড়ালে পালিয়ে গেল।
বিমল হাসতে হাসতে বললে, ও সুন্দরবাবু, এখন আপনার মত কি? দেখছেন, মড়াটা এখনও অটুট দেহে বেঁচে আছে?
প্রথমটা সুন্দরবাবু রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেই সেভাব সামলে নিয়ে বললেন, তবে আমার টিপ ঠিক হয়নি। রোসো, এইবারে দেখাচ্ছি মজাটা! আরে, আরে, বন্দুক তুলতে-না-তুলতেই বেটা যে আবার ডুব মারলে হে! এমন ধড়িবাজ মড়া তো কখনও দেখিনি! হুম, কিন্তু যাবে কোথায়? এই আমি বন্দুক বাগিয়ে রইলুম, উঠেছে কি গুলি করেছি। আমার সঙ্গে কোনও চালাকিই খাটবে না বাবা!
কিন্তু দেহটা আর ভেসে উঠল না। সুন্দরবাবু তার প্রস্তুত বন্দুক নিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করবার পর বললেন, নাঃ! হতভাগা গুলি খেতে রাজি নয়, সরে পড়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে!
জয়ন্তের মুখ গম্ভীর। সে চিন্তিতভাবে বললে, আজ যা দেখলুম, লোকের কাছে বললে আমাদের পাগল বলে ঠাট্টা করবে। বিমলবাবু, জানি না অমৃত-দ্বীপ কেমন ঠাই! কিন্তু সেখানে যারা বাস করে, তাদের চেহারা কি ওই ভাসন্ত দেহটার মতো।
বিমল মাথা নেড়ে বললে, আমিও জানি না।
মানিক বললে, আমার কিন্তু কেমন ভয়-ভয় করছে!
কুমার বললে, ভয়! ভয়কে আমরা চিনি না। ভয় আমাদের কাছে আসতে ভয় পায়।
মানিক একটু হেসে বললে, ভয় নেই, কুমারবাবু, আমিও ভীরু নই। এমন আজগুবি ভুতুড়ে দৃশ্য দেখে আমার বুকটা ছাঁৎ-ছাঁৎ করছে বটে, কিন্তু সেটা হচ্ছে মানুষের সংস্কারের দোষ। আমাকে কাপুরুষ ভাববেন না, দরকার হলে আমি ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানবেরও সঙ্গে হাতাহাতি করতে রাজি আছি। আমি–
কুমার বাধা দিয়ে মানিকের একখানা হাত চেপে ধরে বললে, আমি মাপ চাইছি মানিকবাবু! আমি আপনাকে কাপুরুষ মনে করি না।
সুন্দরবাবু বললেন, তা কুমারবাবু, আপনি আমাকে ভীতুই ভাবুন, আর কাপুরুষই ভাবুন, আমি কিন্তু একটা স্পষ্ট কথা বলতে চাই হুম!
বলুন। স্পষ্ট কথা শুনতে আমি ভালোবাসি।
আমি আর অমৃত-দ্বীপে গিয়ে অমর-লতার খোঁজ-টোজ করব না।
করবেন না?
না, না, না, নিশ্চয়ই না। আমি অমর হতে চাই না। অমর-লতার খোঁজ তো দুরের কথা, আমি আপনাদের দ্বীপের মাটি পর্যন্ত মাড়াতে রাজি নই।
কেন?
জয়ন্তের কথাটা আমারও মনে লাগছে। অমৃত-দ্বীপে যারা থাকে নিশ্চয় তারাও হচ্ছে। জ্যান্ত মড়া! মড়া যেখানে জ্যান্ত হয়, সে দেশকে আমি ঘেন্না করি। থুঃ থুঃ হুম! আমি জাহাজ থেকে নামব না।
কিন্তু তারা যদি জাহাজে উঠে আপনার সঙ্গে ভাব করতে আসে?
কী! আমার সঙ্গে ভাব করতে আসবে? ইশ, তা আর আসতে হয় না, আমার হাতে বন্দুক আছে কি জন্যে? কিন্তু যেতে দিন ও-সব ছাই কথা, এখন কেবিনের ভেতরে চলুন, খিদের চোটে আমার পেট চোঁ-চোঁ করছে।
মানিক বললে, এইটুকুই হচ্ছে আমাদের সুন্দরবাবুর মস্ত বিশেষত্ব। হাজার ভয় পেলেও উনি খিদে ভোলেন না! হয়তো মৃত্যুকালেও উনি অন্তত এক ডজন লুচি আর একটা গোটা ফাউল-রোস্ট খেতে চাইবেন।
সুন্দরবাবু খ্যাঁক খ্যাঁক করে বলে উঠলেন, মানিক, ফের তুমি ফ্যাচ-ফ্যাচ্ করছ! ফাজিল ছোকরা কোথাকার!
*
লিটল ম্যাজেস্টিক জল কেটে সমুদ্রের নীল বুকে সাদা ফেনার উচ্ছ্বাস রচনা করতে করতে এগিয়ে চলেছে। মেঘশূন্য নীলাকাশ থেকে ঝরে পড়ছে পরিপূর্ণ রৌদ্র।
ক্রমে রোদের আঁচ কমে এল, সূর্যের রাঙা মুখ পশ্চিম আকাশ দিয়ে নামতে লাগল। নীচের দিকে।
কুমার ডেকের ওপরে এসে দেখলে, পূর্বদিকে তাকিয়ে বিমল চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার কাছে গিয়ে বললে, কি শুনছ বিমল? মহাসাগরের চিরন্তন সংগীত?
আমি কিছুই শুনছি না ভাই! আমি এখন পূর্বদিকে একটা দৃশ্য দেখবার চেষ্টা করছি।
সূর্যাস্তের দেরি নেই। এখন তো রঙিন দৃশ্যপট খুলবে পশ্চিম আকাশে। আজ প্রতিপদ, চাঁদও আসবে খানিক পরে। তবে পূর্বদিকে এখন তুমি কি দেখবার আশা করো?
যে আশায় এতদূর এসেছি।
মানে?
কুমার, এইমাত্র দূরবিনে দেখলুম পূর্বদিকে একটি পাহাড়ে ঘেরা দ্বীপকে তার একদিকে রয়েছে পাশাপাশি পাঁচটি শিখর! আমি সেই দিকেই তাকিয়ে আছি। খালি-চোখেও ওকে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তুমি ভালো করে দেখতে চাও তো এই নাও দূরবিন।
কুমার বিপুল আগ্রহে দুরবিনটা নিয়ে তাড়াতাড়ি চোখে তুলে অবাক হয়ে দেখলে, বিমলের কথা সত্য!
ছোট্ট একটি দ্বীপ। তার পায়ে উছলে পড়ে নমস্কার করে বয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের চঞ্চল। ঢেউ এবং তার মাথার ওপরে উড়ছে আকাশের পটে চলচ্চিত্রের মতো সাগর-কপোতরা। পশ্চিম আকাশের রক্তসূর্য যেন নিজের পুঁজি নিঃশেষ করে সমস্ত কিরণমালা জড়িয়ে দিয়েছে ওই দ্বীপবাসী শ্যামল শৈলশ্রেণির শিখরে। হঠাৎ দেখলে মনে হয়, ও যেন মায়াদ্বীপ, চোখকে ফাঁকি দিয়ে ও যেন এখনি ডুব মরতে পারে অতল নীলসাগরে!
ততক্ষণে জয়ন্ত ও মানিকের সঙ্গে সুন্দরবাবুও জাহাজের ধারে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং রামহরিরও সঙ্গে এসেছে বাঘা। দ্বীপটিকে খালি-চোখেও দেখা যাচ্ছিল, সকলে কৌতূহলী হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল।
কুমার বললে, ওহে বিমল, দ্বীপটি তো দেখছি একরকম পাহাড়ে মোড়া বললেই হয়! পাহাড়ের গা একেবারে খাড়া উঠে গিয়েছে ওপরদিকে অনেকখানি! ও দ্বীপ যেন পাহাড়ের উঁচু পাঁচিল তুলে সমস্ত বাইরের জগৎকে আলাদা করে দিয়েছে, ওর ভেতরে যেন বাইরের মানুষের প্রবেশ নিষেধ। ও-দ্বীপে ঢোকবার পথ কোন দিকে?
বিমল পকেট থেকে অমৃত-দ্বীপের নকশা বার করে বললে, এই দ্যাখো! দ্বীপের উত্তর পশ্চিম কোণে পাঁচ-পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু শিখরওয়ালা পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে দ্যাখো। দ্বীপের ভেতর থেকে একটি নদী পাহাড় ভেদ করে সমুদ্রের ওপর এসে পড়েছে। আমাদের দ্বীপে ঢুকতে হবে ওই নদীতেই নৌকো বেয়ে।
সুন্দরবাবু বললেন, আমি আগে থাকতেই জানিয়ে রাখছি, আমায় যেন জাহাজ থেকে নামতে বলা না হয়! কেমন রামহরি, তুমিও তো আমার দলেই?
রামহরি প্রথমটা চুপ করে রইল? তারপর মাথা নাড়তে-নাড়তে বললে, তা হয় না মশাই! খোকাবাবুরা যদি নামেন, আমাকেও নামতে হবে।
সুন্দরবাবু বিস্মিত স্বরে বললেন, সে কি হে রামহরি, ও দ্বীপ যে পিশাচদের দ্বীপ! ওখানে যারা মরে যায় তারাও চলে বেড়ায়!
রামহরি বললে, খোকাবাবুদের জন্যে আমি প্রাণও দিতে পারি।
সূর্য অস্ত গেল। জাহাজ তখন দ্বীপের খুব কাছে। ঘনিয়ে উঠল সন্ধ্যার অন্ধকার। জাহাজ শৈল-দ্বীপের পঞ্চশিখরের তলায় গিয়ে দাঁড়াল।
সমুদ্রের পাখিরা তখন নীরব। আকাশ-আসরেও লক্ষ-লক্ষ তারা প্রতিপদের চন্দ্রের জন্যে রয়েছে মৌন অপেক্ষায়। দ্বীপের ভেতর থেকেও কোনওরকম জীবনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
সমুদ্র কিন্তু সেখানেও বোবা নয়, তার কল্লোলকে শোনাচ্ছে স্তব্ধতার বীণায় অপূর্ব এক গীতিধ্বনির মতো।
তারপর ধীরে-ধীরে উঠল চাঁদ, অন্ধকারের নিকষে রূপোলি আলোর ঢেউ খেলিয়ে।
বিমল বললে, জয়ন্তবাবু, দ্বীপে ঢোকবার নদীর মুখেই আমাদের জাহাজ নোঙর করেছে। এখন যদি বোটে করে আমরা একবার দ্বীপের ভেতরটা ঘুরে আসি?
মানিক বললে, কি সর্বনাশ, এই রাত্রে?
জয়ন্ত বললে, লুকিয়ে খবরাখবর নেওয়ার পক্ষে রাত্রিই তো ভালো সময়, মানিক। চাঁদের ধবধবে আলো রয়েছে, আমাদের কোনওই অসুবিধা হবে না।
বিমল বললে, আজ আমরা দ্বীপের খানিকটা দেখেই ফিরে আসব। আমি, কুমার আর জয়ন্তবাবু ছাড়া আজ আর কারুর যাওয়ার দরকার নেই। ফিরে আসবার পর কাল সকালে আমাদের আসল অভিযান শুরু হবে।
মানিক নারাজের মতন মুখের ভাব করে বললে, কিন্তু যদি আপনারা কোনও বিপদে পড়েন?
বিপদের সম্ভাবনা দেখলেই সরে পড়ব। নয়তো একসঙ্গে তিনজনেই বন্দুক ছুঁড়ে সঙ্কেত করব। উত্তরে আপনারাও বন্দুক ছুঁড়ে আমাদের জানিয়ে জাহাজের নাবিকদের নিয়ে সদলবলে দ্বীপের ভেতরে প্রবেশ করবেন!
*
চন্দ্রালোকের স্বপ্নজাল ভেদ করে তাদের নৌকা ভেসে চলল দ্বীপের নদীতে নাচতে নাচতে। নৌকোর দাঁড় টানছে বিমল ও জয়ন্ত, হাল ধরেছে কুমার। চুপিচুপি কাজ সারবে বলে তারা নাবিকদেরও সাহায্য নেয়নি।
খানিকক্ষণ নদীর দুই তীরেই দেখা গেল, পাহাড়রা দাঁড়িয়ে আছে চিরস্তব্ধ প্রহরীর মতো। ঘণ্টাখানেক পরে তারা পাহাড়ের এলাকা পার হয়ে গেল।
দুই তীরে তখন চোখে পড়ল মাঝে-মাঝে খোলা জায়গা, মাঝে-মাঝে ছোট-বড় জঙ্গল ও অরণ্য। চাঁদের আলো দিকে দিকে নানা রূপের মতো মাধুরীর ছবি এঁকে রেখেছে, কিন্তু সেদিকে আকৃষ্ট হল না তখন তাদের দৃষ্টি।
দ্বীপের কোথাও যে-কোনও মানুষের চোখ এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে, এমন প্রমাণও তারা পেলে না। এ দ্বীপ যেন একেবারে জনহীন–এ যেন সবুজক্ষেত্র, বৃহৎ বনস্পতি ও আকাশ-ছোঁয়া পাহাড়দের নিজস্ব রাজত্ব!
জয়ন্ত বললে, বিমলবাবু, এই যদি আপনার অমৃত-দ্বীপ হয়, তাহলে বলতে হবে যে এখানকার অমররা হচ্ছে অশরীরী!
বিমল হঠাৎ বললে, কুমার, নৌকোর মুখ তীরের দিকে ফেরাও।
জয়ন্ত বললে, কেন?
ডাঙায় নেমে দ্বীপের ভেতরটা ভালো করে দেখতে চাই।
কিন্তু নৌকো থেকে বেশি দূরে যাওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে?
বিমল কি জবাব দিতে গিয়েই চমকে থেমে পড়ল। আচম্বিতে অনেক দূর থেকে জেগে উঠল বহুকণ্ঠে এক আশ্চর্য সংগীত! সে গানে পুরুষের গলাও আছে, মেয়ের গলাও আছে! গানের ভাষা বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু বিচিত্র তার সুর–অপুর্ব মিষ্টতায় মধুময়।
কুমার চমৎকৃত কণ্ঠে বললে, ও কারা গান গাইছে? ও গান আসছে কোথা থেকে?
বিমল নদীর বাম তীরের দিকে চেয়ে দেখলে। প্রথমটা খোলা জমি, তারপর অরণ্য।
সে বললে, মনে হচ্ছে গান আসছে ওই বনের ভেতর থেকে। নৌকো তীরের দিকে নিয়ে চলো কুমার! কারা ও গান গাইছে সেটা না জেনে ফেরা হবে না।
খানিক পরেই নৌকো তীরে গিয়ে লাগল। বিমল, কুমার ও জয়ন্ত নিজের নিজের বন্দুক নিয়ে ডাঙায় নেমে পড়ল।
বিমল বললে, খুব সাবধানে, চারিদিকে নজর রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
তারা ধীরে-ধীরে অগ্রসর হল নরম ঘাসে ঢাকা এক মাঠের ওপর দিয়ে। সেই অদ্ভুত সম্মিলিত সংগীতের স্বর স্তরে-স্তরে ওপরে–আরও ওপরে উঠছে এবং তার ধ্বনি জাগিয়ে দিচ্ছে বহুদুরের প্রতিধ্বনিকে! সে যেন এক অপার্থিব সংগীত, ভেসে আসছে নিশীথরাতের রহস্যময় বুকের ভেতর থেকে!
যখন তারা বনের কাছে এসে পড়েছে, কুমার হঠাৎ পেছন ফিরে তাকিয়ে চকিত স্বরে বললে, বিমল, বিমল! পিছনে কারা আসছে দ্যাখো!
বিমল ও জয়ন্ত একসঙ্গে ফিরে দাঁড়িয়ে স্তম্ভিত নেত্রে দেখলে, নদীর দিক থেকে সার বেঁধে এগিয়ে আসছে বহুবহু মূর্তি! সংখ্যায় তারা পাঁচ-ছয়শোর কম হবে না!
বিমল মহাবিস্ময়ে বললে, নদীর ধারে তো জনপ্রাণী ছিল না! কোত্থেকে ওরা আবির্ভূত হল?
যেন আকাশ থেকে সদ্য-পতিত এই জনতার দিকে তারা তাকিয়ে রইল আড়ষ্ট নেত্রে। চাঁদের আলোয় দূর থেকে মূর্তিগুলোকে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল না বটে, কিন্তু তাদের মনে হল মূর্তিগুলো মানুষের মূর্তি হলেও, প্রত্যেকেরই ভাবভঙ্গি হচ্ছে অত্যন্ত অমানুষিক!