রণভেরী

[গ্রিসের বিরুদ্ধে আঙ্গোরা-তুর্ক-গভর্নমেন্ট যে যুদ্ধ চালাইতেছিলেন, সেই যুদ্ধে কামাল পাশার সাহায্যের জন্য ভারতবর্ষ হইতে দশ হাজার স্বেচ্ছাসৈনিক প্রেরণের প্রস্তাব শুনিয়া লিখিত।]

ওরে আয়!

মহাসিন্ধুর পার হতে ঘন রণভেরি শোনা যায় –

ওরে আয়!

ইসলাম ডুবে যায়!

যত শয়তান

সারা ময়দান

জুড়ি খুন তার পিয়ে হুংকার দিয়ে জয়গান শোনা যায়!

আজ শখ করে জুতি টক্করে

তোড়েশহীদের খুলি দুশমন পায় পায় –

ওরেআয়!

তোর জান যায় যাক, পৌরুষ তোর মান যেন নাহি যায়!

ধরে ঝঞ্ঝার ঝুঁটি দাপটিয়া শুধু মুসলিম পঞ্জায়!

তোরমন যায় প্রাণ যায় –

তবেবাজাও বিষাণ ওড়াও নিশান! বৃথা ভীরু সমঝায়!

রণদুর্মদ রণ চায়।

ওরে আয়!

মহাসিন্ধুর পার হতে ঘন রণভেরী শোনা যায়!

ওরে আয়!

ঝননননন রণ-ঝনঝন ঝন্‌ঝনা শোনা যায়!

শুনি এই ঝন্‌ঝনা-ব্যঞ্জনা নেবে গঞ্জনা কে রে হায়!

ওরে আয়!

তোরভাই ম্লান চোখে চায়,

মরিলজ্জায়,

ওরে সব যায়,

তবু কবজায় তোর শমশের[১] নাহি কাঁপে আপশোশে হায়?

রণ দুন্দুভি শুনি খুন-খুবি[২]

নাহিনাচে কি রে তোর মরদের ওরে দিলিরের[৩] গোর্দায়[৪]?

ওরেআয়!

মোরাদিলাবার[৫] খাঁড়া তলোয়ার হাতে আমাদেরই শোভা পায়!

তারা খিঞ্জির[৬], যারা জিঞ্জির[৭]-গলে ভূমি চুমি মুরছায়।

আরেদূর দূর! যত কুক্কুর

আসি শের-বব্বরে[৮] লাথি মারে ছি ছি ছাতি চড়ে! হাতি

ঘাল হবে ফেরু[৯]-ঘায়?

ওরেআয়!

বোলেদ্রিম দ্রিম তানা দ্রিম দ্রিম ঘন রণ-কাড়া-নাকাড়ায়!

শের-নর[১০] হাঁকড়ায়[১১]

ওরেআয়!

ছোড়্মন-দুখ

বন্দুক তোপ, সন্দুক তোর পড়ে থাক, স্পন্দুক[১২] বুক ঘায়!

নাচতাতা থই থই তাতা থই–

থই তাণ্ডব, আজ পাণ্ডব সম খাণ্ডব-দাহ চাই।

ওরে আয়।

কর কোরবান [১৩] আজ তোর জান দিল আল্লার নামে ভাই!

দীন দীন-রব আহব বিপুল বসুমতী ব্যোম ছায়!

শেল গর্জন

করি তর্জন

হাঁকে-, ‘বর্জন নয় অর্জন’ আজ শির তোর চায় মা-য়!

সবগৌরব যায় যায়;

ওরেআয়!

বোলে দ্রিম দ্রিম তানা দ্রিম দ্রিম ঘন রণ-কাড়া-নাকাড়ায়!

ওরে আয়!

কড় কড় বাজে রণ-বাজা, সাজ সাজ রণ-সজ্জায়!

ওরেআয়!

মুখ ঢাকিবি কি লজ্জায়?

হুরহুররে!

কতদূর রে

সেইপুর রে

যথাখুন-খোশরোজ[১৪] খেলে হররোজ[১৫] দুশমন খুনে ভাই!

সেইবীর-দেশে চল বীর বেশে,

আজমুক্ত দেশেরে মুক্তি দিতে রে বন্দিরা ওই যায়!

ওরেআয়!

বল্‘জয় সত্যম্ পুরুষোত্তম’, ভীরু যারা মার খায়!

নারী আমাদেরই শুনি রণ-ভেরি হাসে খলখল, হাত-তালি দিয়ে রণে ধায়!

মোরারণ চাই রণ চাই,

তবেবাজহ দামামা, বাঁধহ আমামা[১৬], হাথিয়ার পাঞ্জায়,

মোরাসত্য-ন্যায়ের সৈনিক, খুন-গৈরিক বাস গায়।

ওরেআয়!

কড় কড় বাজে রণ-বাজা, সাজ সাজ রণ-সজ্জায়!

ওরেআয়!

অব-রুদ্ধের দ্বারে যুদ্ধের হাঁক নকিব[১৭] ফুকারি যায়!

তোপদ্রুম দ্রুম গান গায়!

ওরেআয়!

ঝনন রনন খঞ্জর-ঘাত পঞ্জরে মুরছায়!

হাঁকোহাইদর[১৮]

নাইনাই ডর,

ভাই তোর ঘুর-চরখির সম খুন খেয়ে ঘুর খায়।

ঝুটাদৈত্যেরে

নাশি, সত্যেরে

দিবি জয়-টীকা তোরা, ভয় নাই ওরে ভয় নাই হত্যায়!

ওরে আয়!

মোরা খুন-জোশি[১৯] বীর, কঞ্জুসি[২০] লেখা আমাদের খুনে নাই।

দিয়ে সত্য ও ন্যায়ের বাদশাহি, মোরা জালিমের খুন খাই।

মোরাদুর্মদ,ভরপুর মদ

খাই ইশ্‌কের[২১], ঘাত শমশের ফের নিই বুক নাঙ্গায়!

লালপলটন মোরা সাচ্চা

মোরা সৈনিক, মোরা শহীদান বীর বাচ্চা!

মরি জালিমের[২২] দাঙ্গায়!

মোরাঅসি বুকে বরি হাসি মুখে মরি, ‘জয় স্বাধীনতা’ গাই।

ওরেআয়!

মহাসিন্ধুর পার হতে ঘন রণভেরি শোনা যায়!!

সূত্রনির্দেশ ও টীকা

  1. শমশের : তরবারি।
  2. খুন-খুবি : রক্তোন্মত্ততা।
  3. দিলিরের : সাহসী, নির্ভীক।
  4. গোর্দায় : কলিজায়।
  5. দিলাবার : প্রাণবন্ত।
  6. খিঞ্জির : শূকর।
  7. জিঞ্জির : শিকল।
  8. শের-বব্বর : সিংহ।
  9. ফেরু : শৃগাল।
  10. শের-নর : পুরুষসিংহ।
  11. হাঁকড়ায় : গর্জন করছে।
  12. স্পন্দুক : কাঁপুক।
  13. কোরবান : উৎসর্গ।
  14. খুন-খোশরোজ : রক্ত-মহোৎসব।
  15. হররোজ : প্রতিদিন।
  16. আমামা : শিরস্ত্রাণ।
  17. নকিব : তূর্যবাদক।
  18. হাইদর : মহাবীর হজরত আলির নাম, সিংহের হাঁক।
  19. খুন-জোশি : রক্ত-পাগল।
  20. কঞ্জুসি : কৃপণতা।
  21. ইশ্‌কের : প্রেমের।
  22. জালিম : অত্যাচারী।